পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/২৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় তোলে, সবিতার এই হাসিতে সেই মুহূর্জের উদাস করিয়া তোলার জাশ্চৰ্য্য মাস্ক নিহিত। বলিলেন, কি জানি হতেও পারে । এক জন্মেই যে কত জন্মান্তর ঘটে যায় মামুষের, তার কি হিসাব আছে ? বিমলবাবু কথা কহিলেন না। বিস্মিত নয়নে লক্ষ্য করিতে লাগিলেন, সবিতার পরিধানে একখানি খয়েরীপাড় দুধেগরদ শাড়ি। কার্য্যোপলক্ষে একবার কাশী গিয়া বিমলবাবুই এই গরদের শাড়িখানি পূজা-আহ্নিকে ব্যবহারের জন্ত সবিতাকে জানির দিয়াছিলেন । শাড়িখানি পরিবার জন্য অনুরোধ করিলে সবিতা হাসিয়া জবাব দিয়াছিলেন, এখন থাক । সময় হলে পরবো । আজ সেই শাড়িখানি পরিয়াই তিনি বিমলবাবুর জন্য অপেক্ষা করিতেছিলেন। বিমলবাবু বলিলেন, জন্মান্তর মানতাম না, কিন্তু তুমি আমায় মানালে। সত্যি বটে ওটা এই জীবনেই ঘটে । তাই এতদিন পরে তোমার তো সময় হয়েচে আমার এ-জন্মেই আমার দেওয়া শাড়ি পরবার। সবিতাকে নিরুত্তর দেখিয়া বিমলবাবু বলিলেন, হয়তো ভুল বলচি । সময় হয়েচে না বলে সময় ফুরিয়েচে বলাই উচিত ছিল আমার না সবি—রেণুর মা ? বিমলবাবুর প্রশ্নের জবাব এড়াইয়া সবিতা যুদ্ধ হাসিয়া বলিলেন, কিন্তু তুমি এই বিড়ম্বন আরও কতদিন ভোগ করবে বল তো ? ভিতর থেকে যে ডাকটা আপনা হতে বেরিয়ে আসচে, তাকে বারে বারে গলা টিপে ঠেলে সরিয়ে অন্তের মুখের ডাক জাওড়াতে চেষ্টা করচো ! কতবারই তো ঠোক্কর খেলে । তবু ছাড়বে না ? বিমলবাবু অপ্রতিভ হইয়া পড়িলেন। সবিতা বলিতে লাগিলেন, আগে ডেকেচো নতুন-বোঁ, সেটা তোমার নিজের মুখের ডাক নয়। ও নামে প্রথম যিনি ডেকেচেন তারই মুখে ওটা মানায়। তোমার মুখে বেহরো শোনালো। তার পরে ডাকতে চেষ্টা করেচো রেণুর মা, সেও তোমার মুখে বার বার বাধা পাচ্ছে, স্বচ্ছন্দ হয়ে উঠতে পারেনি, পারবেও না কোনদিন । তবে কি বলে তোমায় ডাকবো বলে দাও তুমি ! কেন সবিতা' ! যে ডাক আপনা হতে সহজে মুখে আসচে। তাই না হয় ডাকবে। কিন্তু রেণুর মা’ বলে ডাকতে তুমিই ষে আমাকে বলেছিলে একদিন । আচ্ছা সত্যি করে বলে, না জেনে কোনোনি আমর্ধ্যাদা ঘটিয়েচি কি সে-ডাকের ? ও-কথা মনেও এনে না। তোমাকে ও-নামে ডাকতে বলা আমারই স্থল হয়েছিল। তোমার কাছে আমার তো ও-পরিচয় নয়। কোনদিনই ও-ডাকটা তাই তোমার কণ্ঠে সজীব হয়ে উঠলে না। দেখে অনেক দুখ পেয়ে, একটা বৰ। ९२१