পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/৩১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাল্যকালের গল্প নয়ন হঠাৎ জবাব দিলে না, একটু ভেবে বললে,—বোধ হয় জগতে সবাই ধরিয়ে জিতে পারে না বলে । কেন যে পারে না, কেন যে মানুষে এ অস্কায় করে, সে তত্ত্ব সেদিনও জানিনি, আজও না। তবু, এই কথাটাই ভাবতে ভাবতে খানিকটা পথ চলার পরে জিজ্ঞাসা করলাম,—আচ্ছা নয়নদা, ওরা ফিরে গিয়ে আবার তো মানুষ মারবে ? নয়ন বললে, না দাদা, আর মারবে না। আমি বেঁচে থাকতে এ-কাজ ওরা আর কখনো করবে না । জবাবটায় বেশ প্রসন্ন হতে পারলাম না। ফাসি হওয়াই ছিল আমার মনঃপুত । বললাম,—কিন্তু ওরা বেঁচে তো গেল। শাস্তি তো হলো না । নয়ন অন্তমনস্ক হয়ে কি ভাবছিল, বললে, কি জানি,—হবে হয়তো একদিন । পরক্ষণে সচেতন হয়ে বললে,—আমি তো এর উত্তর জানিনে দাদাভাই, তোমার ঠাকুরমা জানেন। তুমি বড় হলে তাকে একদিন জিজ্ঞাসা ক'রো। আমার কিন্তু বড় হবার সবুর সইল না, বাড়িতে পা দিয়ে সমস্ত বিবরণ, শুধু হাতপা কাপার অবাস্তর কথাগুলো বাদ দিয়ে—অঙ্গ-প্রতঙ্গের যথোচিত সঞ্চালনে আমাদের ঠ্যাঙাড়ে-বিজয়-কাহিনী বর্ণনা করে ঠাকুরমাকে সবিস্তারে বুঝিয়ে দিলাম—গরু কিনতে গিয়ে আজ কি কাণ্ড ঘটেছিল। আগাগোড়া মন দিয়ে শুনে তিনি কেবল একটা নিশ্বাস ফেলে আমাকে বুকের কাছে টেনে নিয়ে স্তন্ধ হয়ে রইলেন। নয়ন এতক্ষণ চুপ করে শুনছিল। আমার বলা শেষ হতে টাকা পাচটি ঠাকুরমার পায়ের কাছে রেখে বললে,—গরুটা এমনিই পেলাম। তোমার টাকা তোমার কাছেই ফিরে এল দিদি। না নিলেন পিসিম, না নিলে তোমার মেজবোঁয়ের ভাইদের দল পথে । ঠাকুরমা একটু হেসে বললেন, দেখা হলে মেজবোঁকে জানাব। কিন্তু ও টাকা আমিও নেবো না নয়ন। ও তোর ঠাকুরের ভোগে লাগাগে যা। কিন্তু একটা কথা আজ তোকে বলি নয়ন, এখনো তেমন বোষ্টম হতে তুই পারলিনে। কেন দিদি ? তারা কি টাকা বাজিয়ে লোক তোলায় ? ধর যদি লোভ সামলাতে না পেরে ছুটেই জালত ? * তাহলে আরও গোট পাঁচ-ছয় মরত। তাতে নয়নের পাপের ভরায় কতটুকুট বা তার চাপত, দিদি ? ঠাকুরমা চুপ করে রইলেন। এ ইঙ্গিতের অর্থ জানেন তিনি, আর জানে নয়ন নিজে। কিন্তু সেও জার কিছু বললে না। দূর থেকে তাকে ভূমিষ্ঠ প্ৰণাম করে পাচটি মাখায় ঠেকিয়ে নিঃশব্দে বেরিয়ে গেল । Qevo