পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/৩১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাল্যকালের গল্প নক বললে, ঐ দেখুন আবার নড়চে । খুড়ো বললেন, ই নড়চে, ভূত হয়ে তোকে খাবে বলে—মুখের কথাটা তার শেষ হ’লে না, অকস্মাৎ লেপ-কাথা জড়ানো মড়া হাটু গেড়ে খাটের উপর বলে ভয়ঙ্কর বিত্ৰ খোনা গলায় চেচিয়ে উঠলো,—ন না-নরুকে নয়—গোপালকে খাবো— ওরে বাবা রে! আমরা সবাই মারলাম উৰ্দ্ধশ্বাসে দৌড়। গোপালপুড়োর স্বমুখে ছিল কাঠের ভূপ, তিনি উপরের দিকে আমাদের পিছনে ছুটতে না পেরে কঁাপিয়ে গিয়ে পড়লেন গঙ্গার জলে। সেই কনকনে ঠাও একবুক জলে দাড়িয়ে চেঁচাতে লাগলেন—বাবা গো, গেছি গো—স্কৃতে খেয়ে ফেললে গো —রাম-রাম-রাম— এদিকে সেই ভূতও তখন মুখের ঢাকা ফেলে দিয়ে চেঁচাতে লাগল—ওরে নির্মল, ওরে মণি, ওরে নরু, পালাসনে রে—আমি লালু–ফিরে আয়—ফিরে আয়— লালুর কণ্ঠস্বর আমার কানে পৌঁছলো। নিজেদের নিবুদ্ধিতায় অত্যন্ত লজ্জা পেয়ে সবাই ফিরে এলাম। গোপালখুড়ো শীতে কাপতে কাপতে ডাঙায় উঠলেন। লালু তীর পায়ের ধুলো নিয়ে সলজে বললে, সবাই জলের ভয়ে পালাল, কিন্তু আমি মড়া ছেড়ে যেতে পারলাম না, তাই লেপের মধ্যে ঢুকে পড়েছিলাম। খুড়ো বললে, বেশ করেছিলে, বাবা, খাসা বুদ্ধি করেছিলে। এখন যাও ভাল করে গঙ্গামাটি মেখে চান করো গে। এমন শয়তান ছেলে আমি আমার জন্মে দেখিনি— তিনি কিন্তু মনে মনে তাকে ক্ষমা করলেন। বুঝলেন এতবড় ভয়শূন্তত তার পক্ষেও অসম্ভব। এই রাতে একাকী শ্মশানে কলেরার মড়া, কলেরার বিছানা—এ সব সে গ্রাহ করলে না ! মুখে আগুন দেবার কথায় খুড়ে। আপত্তি করলেন, না, সে হবে না। ওর মা শুনতে পেলে আর আমার মুখ দেখবেন না। শবদাহ সমাধা হ’লে ! আমরা গঙ্গায় স্বান সেরে যখন বাড়ি ফিরলাম তখন সেইমাত্র সূর্য্যোদয় হয়েচে । ۹ ه وی ،