পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰছ একে একে সমস্ত বন্ধ করলে, সব লোকসান পূর্ণ হয়ে এলো—এই তোমাকে অবিশ্বলি করতে পারিনে বলে আমি হলাম অন্ধ, আর যারা চক্রান্ত করে, বাইরের লোক জড়ো করে, তোমাকে নীচে টেনে নামিয়ে বাড়ির বার করে দিলে তারাই চক্ষুষ্মান ? তাদের নালিশ, তাদের নোংরা কথায় কান দিইনি বলেই আজ আমার এই দুৰ্গতি ? আমার দুঃখের এই কি হোলো সত্যি ইতিহাস ? তুমিই বল ত নতুন-বোঁ ? নতুন-বোঁ কখন যে মুখ তুলিয়া স্বামীর মুখের প্রতি দুই চোখ মেলিয়া চাহিয়াছিল বোধ হয় তাহা নিজেই জানিত না, এখন হঠাৎ তাহার কথা থামিতেই সে যেন চমকিয়া আবার মুখ নীচু করিল। ব্ৰজবাবু বলিলেন, তুমি ছিলে শুধুই কি স্ত্রী ? ছিলে গৃহের লক্ষ্মী, সমস্ত পরিবারের কত্রী, আমার সকল আত্মীয়ের বড় আত্মীয়, সকল বন্ধুর বড়—তোমার চেয়ে শ্রদ্ধা-ভক্তি আমাকে কে কবে করেচে ? এমন করে মঙ্গল কে কবে চেয়েচে ? কিন্তু একটা কথা আমি প্রায়ই ভাবি নতুন-বোঁ, কিছুতেই জবাব পাইনে। আজ দৈবাৎ যদি কাছে পেয়েচি, বল তো সেদিন কি হয়েছিল ? এত আপনার হয়েও কি আমাকে সত্যিই ভালোবাসতে পারোনি ? না বুঝে তুমি তো কখনো কিছু করো না—দেবে এর সত্যি জবাব ? যদি দাও, হয়তো আজও মনের মধ্যে আবার শাস্তি পেতে পারি। বলবে ? নতুন-বোঁ মুখ তুলিয়া চাহিল না, কিন্তু মৃদুকণ্ঠে কহিল, আজ নয় মেজকর্তা । আজ নয় ? তবে, কবে দেবে বল? আর যদি দেখা না হয়, চিঠি লিখে জানাবে ? এবার নতুন-বেী চোখ তুলিয়া চাহিল, কহিল, না মেজকর্তা, আমি তোমাকে চিঠি লিখবো না, মুখেও বলবো না। তবে জানবো কি করে ? জানবে যেদিন আমি নিজে জানতে পারবো । কিন্তু এ যে হেয়ালি হলো । - তা হোক। আজ আশীৰ্ব্বাদ কর, এর মানে যেন একদিন তোমাকে বুঝিয়ে দিতে পারি। স্বারের বাহির হইতে সাড়া আসিল, আমার বড় দেরি হয়ে গেল। এই বলিয়া রাখাল প্রবেশ করিল, এক ডিবা পান সন্মুখে রাখিয়া দিয়া বলিল, সাবধানে তৈরী করিয়ে এসেচি মা, এতে অশুচি স্পর্শদোষ ঘটেনি। নিঃসঙ্কোচে মুখে দিতে পারেন। - নতুনবে ইঙ্গিতে স্বামীকে দেখাইয়া দিতে রাখাল ঘাড় নাড়িল । ব্ৰজবাবু বলিলেন, আমি তেরো বচ্ছর পান খাওয়া ছেড়ে দিয়েচি নতুন-বোঁ, এখন তুমি হাতে করে দিলেও মুখে দিতে পারবে না। . રજ