পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 নতুন-মা ডাকেন নাই, রাখাল নিজে যাচিয়া তাহার সাহায্য করিতে চলিয়াছে। তখনকার দিনে রমণীবাবু রাখাল-রাজকে ভালো করিয়াই চিনিতেন। তাহার পরে দীর্ঘ তেরো বৎসর গত হইয়াছে এবং উভয় পক্ষেই পরিবর্তন ঘটিয়াছে বিস্তর, কিন্তু তাহাকে না-চিনিবারও হেতু নাই, অন্তত: সেই সম্ভাবনাই সমধিক । গাড়ির মধ্যে বসিয়া রাখাল ভাবিতে লাগিল, হয়তো তিনি দোকানে যান নাই, হয়ত ফিরিয়া আসিয়াছেন, হয়তো বাড়িতে না থাকার অপরাধে তাহার সম্মুখে নতুন-মাকে অপমানের একশেষ করিয়া বসিবেন—তখন লজ্জা ও দুঃখ রাখিবার ঠাই থাকিবে না—এইরূপ নানা চিন্তায় সে নতুন-মার পাশে বসিয়াও অস্থির হইয়া উঠিল। স্পষ্ট দেখিতে লাগিল তাহার এই অভাবিত আবির্ভাবে রমণীবাবুর ঘোরতর সন্দেহ জাগিবে এবং রেণুর বিবাহ ব্যাপারটা যদি নতুন-মা গোপনে রাখিবার সঙ্কল্পই করিয়া থাকেন তো তাহ নিঃসন্দেহে ব্যর্থ হইয়া যাইবে । কারণ, সত্য ও মিথ্যা অভিযোগের নিরসনে আসল কথাটা তাহাকে অবশেষে প্রকাশ করিতেই হইবে। সেই অভদ্র চাকরটা ড্রাইভারের পাশে বসিয়াছিল ; মনিবের ভয়ে তাহার তাগিদের উদভ্ৰান্ত রুক্ষতা ও প্রত্যুত্তরে নতুন-মার বেদনামুন্ধ লজ্জিত কথাগুলি রাখালের মনে পড়িল এবং সেই জিনিসেরই পুনরাবৃত্তি স্বয়ং মনিবের মুখ হইতে এখন কি আকার ধারণ করিবে ভাবিয়া অতিষ্ঠ হইয়া কহিল, নতুন-মা, গাড়িটা থামাতে বলুন, আমি নেমে যাই। নতুন-মা বিস্ময়াপন্ন হইলেন— কেন বাবা ; কোথাও কি জরুরী কাজ আছে ? রাখাল বলিল, না, কাজ তেমন নেই, কিন্তু আমি বলি আজ থাক । কিন্তু মেয়েটাকে যদি বাচান যায় সে তো আজই দরকার রাজু। অন্যদিন তো হবে না । বলা কঠিন। রাখাল সঙ্কোচ ও কুষ্ঠায় বিপন্ন হইয়া উঠিল, শেষে মৃদুকণ্ঠে বলিল, মা, আমি ভাবচি পাছে রমণীবাবু কিছু মনে করেন। শুনিয়া নতুন-মা হাসিলেন-ও, তাই বটে। কিন্তু কে-একটা লোক কি-একটা মনে করবে বলে মেয়েট মারা যাবে বাবা ? বড় হয়ে তোমার বুঝি এই বুদ্ধি হয়েছে ? তা ছাড়া, শুনলে তো তিনি বাড়ি নেই, পুলিশ-হাঙ্গামার ভয়ে পালিয়েছেন। হয়তো দু-তিনদিন আর এ-মুখে হবেন না। W8