পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় রাখাল আশ্বস্ত হইল না। ঠিক বিশ্বাস করিতেও পারিল না, প্রতিবাদও করিল না। ইতিমধ্যে গাড়ি আসিয়া দ্বারে পৌঁছিল। দেখিল তাহার অনুমানই সত্য। একজন প্রৌঢ়-গোছের ভদ্রলোক উপরের বারান্দায় থামের আড়ালে দাড়াইয়া প্রতীক্ষা করিতেছিলেন, দ্রুতপদে নামিয়া আসিলেন। রাখাল মনে মনে প্রমাদ গনিল । তাহার চোখে-মুখে কণ্ঠস্বরে উদ্বেগ পরিপূর্ণ, কহিলেন, এলে? শুনেচে তো জীবনের স্ত্রী কি সৰ্ব্বনাশ– - কথাটা সম্পূর্ণ হইল না, সহসা রাখালের প্রতি চোখ পড়িতেই থামিয়া গেলেন। নতুন-মা বলিলেন, রাজুকে চিনতে পারলে না ? তিনি একমুহূৰ্ত্ত ঠাহর করিয়া বলিয়া উঠিলেন, ও, রাজু। আমাদের রাখাল ! বেশ, চিনতে পারবো না ? নিশ্চয় । রাখাল পূৰ্ব্বেকার প্রথামতো হেঁট হইয়া নমস্কার করিল। রমণীবাবু তাহার হাতটা ধরিয়া ফেলিলেন, বলিলেন, এতকাল একবার দেখা দিতে নেই হে ! বেশ যা হোক সব। কিন্তু কি সৰ্ব্বনাশ করলে মেয়েটা ! পুলিশে এবার বাড়িমৃদ্ধ সবাইকে হয়রান করে মারবে। দুশ্চিন্তার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া কহিলেন, বার বার তোমাকে বলি নতুন-বে, যাকে-তাকে ভাড়াটে রেখে না। লোকে বলে শূন্ত গোয়াল ভালো। নাও এবার সামলাও । একটা কথা যদি কখনো আমার শুনলে । রাখাল কহিল, একে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন নি কেন ? হাসপাতালে ? বেশ! তখন কি আর ছাড়ানো যাবে ভাবে ? আত্মহত্যা যে ! রাখাল কহিল, কিন্তু তাকে বাচানোর চেষ্টা করা চাই তো । নইলে আত্মহত্যা যে র্ত্যকে বধ করায় গিয়ে দাড়াবে। রমণীবাবু ভয় পাইয়া বলিলেন, সে তো জানি হে, কিন্তু হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে কিছুএকটা করে ফেললেই তো হবে না। একটা পরামর্শ করা তো দরকার ? পুলিশের ব্যাপার কি না ? নতুন-মা বলিলেন, তাহলে চলে ; কোন ভালো এটর্নির অফিসে গিয়ে আগে পরামর্শ করে আসা যকৃ। রমণীবাবু জলিয়া গেলেন—তামাসা করলেই তো হয় না নতুন-বোঁ, আমার কথা শুনলে আজ এ বিপদ ঘটতে না। এ-সকল অসুযোগ অর্থহীন উচ্ছ্বাস ব্যতীত কিছুই নয়, তাহ নূতন লোক রাখালও বুঝিল। নতুন-মা জবাব দিলেন না, হাসিয়া শুধু রাখালকে কহিলেন, চলো তো বাবা, দেখিগে কি করা যায়। রমণীবাবুকে উদ্দেশ করিয়া বলিলেন, তুমি ওপরে গিয়ে বোসে গে সেজোবাবু, ছেলেটাকে নিয়ে আমি যা পারি করি গে, কেবল এইটি কোরো, ব্যস্ত হয়ে লোকজনকে যেন বিব্রত করে তুলে না। \ని