পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় বোঁটি মাথা নাড়িয়া আপত্তি জানাইল । রাখাল বলিল, এভাবে মরে লাভ কি বলুন তো? আর আত্মহত্যার মতো পাপ নেই তা কি কখনো শোনেননি ? যে স্ত্রীলোকটি বলিতেছিল, বাড়িতে ডাক্তার আনিয়া চিকিৎসার চেষ্টা করা উচিত, রাখাল তাহার জবাবে নতুন মাকে দেখাইয়া কহিল, ইনি যখন এসেছেন তখন টাকার জন্যে ভাবনা নেই—একজনের জায়গায় দশজন ডাক্তার এনে হাজির করে দিতে পারি, কিন্তু তাতে সুবিধে হবে না নতুন-মা। আর হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রাণটা যদি ওঁর বাচানো যায়, পুলিশের হাত থেকে দেহটাকে বাচানো যাবে, এ ভরসা আপনাদের আমি দিতে পারি। নতুন-মা সম্মত হইয়া বলিলেন, তাই করে বাবা, গাড়ি আমার দাড়িয়েই আছে, তুমি নিয়ে যাও। র্তাহার আদেশে একজন দাসী সঙ্গে গিয়া পৌছাইয়া দিতে রাজি হইল। নতুন-ম রাখালের হাতে কতকগুলা টাকা গুজিয়া দিলেন । সন্ধ্যা শেষ হইয়াছে, আসন্ন রাত্রির প্রথম অন্ধকারে রাখাল অৰ্দ্ধসচেতন এই অপরিচিত বন্ধটিকে জোর করিয়া গাড়ীতে তুলিয়া হাসপাতালের উদেখে যাত্রা করিল। পথের মধ্যে উজ্জল গ্যাসের আলোকে এই মরণপথযাত্রী নারীর মুখের চেহারা তাহার মাঝে মাঝে চোখে পড়িয়া মনে হইতে লাগিল যেন ঠিক এমনটি সে আর কখনও দেখে নাই। তাহার জীবনে মেয়েদের সে অনেক দেখিয়াছে। নানা বয়সের, নানা অবস্থার, নানা চেহারার। একহারা, দোহারা, তেহার, চারহারা—খ্যাংরা কাঠির ন্যায়, চ্যাঙ, বেটে—কালো, সাদা, হলদে, পাণ্ডটে—চুল-বালা, চুল-ওঠা, পাশ-কর, ফেলকরা-গোল ও লম্ব মুখের—এমন কত। আত্মীয়তার ও পরিচয়ের ঘনিষ্ঠতার অভিজ্ঞতা তাহার পর্য্যাপ্তেরও অধিক। এদের সম্বন্ধে এই বয়সেই তাহার আদেখলেপণা ঘুচিয়াছে। ঠিক বিতৃষ্ণ নয়, একটা চাপা অবহেলা কোথায় তাহার মনের এক কোণে অত্যন্ত সঙ্গোপনে পুঞ্জিত হইয়া উঠিতেছিল, কাল তাহাতে প্রথমে ধাক্কা লাগিয়াছিল নতুন-মাকে দেখিয়া। তের বৎসর পূৰ্ব্বেকার কথা সে প্রায় ভুলিয়াই ছিল, কিন্তু সেই নতুন-মা যৌবনের আর এক প্রান্তে পা দিয়া কাল যখন তাহার ঘরের মধ্যে দেখা দিলেন, তখন সকৃতজ্ঞ-চিত্তে আপনাকে সংশোধন করিয়া এই কথাটাই মনে মনে বলিয়াছিল যে, নারীর সত্যকার রূপ যে কতবড় দুর্লভ-দর্শন তাহা জগতের অধিকাংশ লোক জানেই না। আজ গাড়ির মধ্যে আলো ও আঁধারের ফঁাকে ফঁাকে মরণাপন্ন এই মেয়েটিকে দেখিয়া ঠিক সেই কথাটাই সে আর একবার মনে মনে আবৃত্তি করিল। বয়স উনিশ-কুড়ি, সাজসজ্জা আভরণহীন দরিদ্র ভদ্র গৃহস্থের মেয়ে, অনশন ও অৰ্দ্ধাশনে পাণ্ডুর মুখের পরে মৃত্যুর ছায়া পড়িয়াছে—কিন্তু রাখালের মুগ্ধ চক্ষে মনে হইল, মরণ যেন এই মেয়েটিকে একেবারে স্বর্গের পারে পৌছাইয়া দিয়াছে। কিন্তু ইহা দেহের ゥ"