পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ ভয়ে পড়ে কেমন দিয়ে ফেললে । কিন্তু তাতেই কি কুলালো ? হাজার দশেক কম পড়ে যায়, আমাকে আবদার ধরলেন, সেজবাবু, ওটা তুমি দিয়ে দাও। বললুম, শ্ৰীচরণে অদেয় কি আছে বলো ? এ দেহ-মন-প্রাণ সবই তো তোমার! এই বলিয়া তিনি অত্যন্ত অরুচিকর স্থূল রসিকতার আনন্দে নিজেই হি: হি: হি: করিয়া টানিয়া টানিয়া হাসিতে লাগিলেন। রাখাল লজ্জায় মুখ ফিরাইয়া রহিল। রমণীবাবু চলিয়া গেলে সবিতা বলিলেন, বেলা হলো, এইখানেই স্নান করে দুটি খেয়ে নাও বাবা, ও-বেলায় তোমাকে আবার অনেক খাটতে হবে । অনেক কাজ । রাখাল কহিল, কাজে ভয় পাইনে মা, খাটতেও রাজি আছি, কিন্তু এ-বেলাটা নষ্ট করতে পারবো না। আমাকে ও-বাড়িতে একবার যেতে হবে। কাল গেলে হয় না ? না ! তবে কখন আসবে বলো ? আসবো নিশ্চয়ই, কিন্তু কখন কি করে বলবো মা ? তারক এখানে নেই বুঝি ? না, সে তার বদ্ধমানের মাস্টারিতে গিয়ে ভৰ্ত্তি হয়েছে । থাকলেও হয়তো আসতো না । তাহার তীব্র ভাবাস্তর সবিতা লক্ষ্য করিয়াছিলেন, একটু প্রসন্ন করিতে কহিলেন, ওঁর ওপর রাগ করোনা রাজু, ওঁদের কথাবাৰ্ত্তাই এমনি । এই ওকালতিতে রাখাল মনে মনে আরও চটিয়া গেল, বলিল, না মা, রাগ নয়, একটা গরুর ওপর রাগ করতে যাবোই বা কিসের জন্যে । বলিয়া চলিয়া গেল । সিড়ি দিয়া নামিতে নামিতে কহিল, না:–কৃতজ্ঞতার ঋণ মনে রাখা কঠিন। যদিচ, রাখাল মনে মনে বুঝিয়াছে, যে-লোকটি নতুন-মার তত টাকার দেনা শোধ করিয়াছে তাহার নাম রমণীবাবু জানে না, তথাপি সেই ধৰ্ম্মপ্রাণ সদাশয় মানুষটির প্রতি এই অশিষ্ট ভাষা সে ক্ষমা করিতে পারিল না। অথচ নতুন-ম। আমলই দিলেন না, যেন কথাটা কিছুই নয়। পরিশেষে তাহারই প্রতি লোকটার কদৰ্য্য রসিকতা। কিন্তু এবার আর তাহার রাগ হইল না, বরঞ্চ উহাই যেন তাহার মনের জালাটাকে হঠাৎ হান্ধা করিয়া দিল। সে মনে মনে বলিল, এ ঠিক হয়েচে । এই ওঁর প্রাপ্য। আমি মিথ্যে জলে মরি। বৌবাজারে ট্রাম হইতে নামিয়া গলির মধ্যে ঢুকিয়া ব্রজবিহারীবাবুর বাটীর সম্মুখে জাসিয়া রাখালের মনে হইল তাহার চোখে ধাধা লাগিয়াছে—সে আর কোথাও জাসিয়া পড়িয়াছে। এ কি ! দরজায় তালা দেওয়া, উপরের জানালাগুলো সব বন্ধ— একটা নোটিশ ঝুলিতেছে বাড়ি ভাড়া দেওয়া হইবে। সে অনেকক্ষণ নিজেকে ●b"