পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ নিশ্চয় যাবেন ডাক্তারবাবু, আমাদের ডাকবার লোক নেই। ডাকবার দরকার নেই রাখাল, আমি আপনিই যাবো । সেখান হইতে ফিরিয়া রাখাল নিজের বাসায় আসিয়া শুইয়া পড়িল । মন একেবারে ভাঙিয়া পড়িয়াছে। ব্ৰজবাবুর দুর্দশ যে কত মহৎ ও সব্বনাশের পরিমাণ যে কিরূপ গভীর, নানা কাজের মধ্যে এ-কথ। কখনো সে ভাবিয়া দেখিবার অবকাশ পায় নাই, নিজনে ঘরের মধ্যে এইবার তাহার দু'চোখ বহিয়া হু হু করিয়া জল পড়িতে লাগিল। কোথায় যে ইহার কূল এবং এই দুঃখের দিনে সে যে কি করিতে পারে ভাবিয়া পাইল না । কি করিয়া যে এত শীঘ্র এমনটি ঘটিল তাহা কল্পনার অগোচর। তার উপর রেণু পীড়িত। পাড়ায় টাইফয়েড জর হইতেছে সে জানিত, ডাক্তারের কথার মধ্যেও এমনি একটা সন্দেহের ইঙ্গিত সে লক্ষ্য করিয়াছে। উপদেশ দিবার লোক নাই, শুশ্রুষা করিতে কেহ নাই, চিকিৎসা করাইবার অর্থও হয়তে হাতে নাই । এই নিরীহ নির্বিরোধী মানুষটির কথা আগাগোড়া চিন্তা করিয়া তাহার সংসারে ধৰ্ম্মবুদ্ধি, ভগবৎভক্তি, সাধুতা সকলের পরেই যেন ঘৃণা ধরিয়া গেল। সে ভাবিতেছিল, দিল্লী হইতে ফিরিয়া নানাবিধ অপব্যয়ে তাহার নিজের হাতও শুষ্ঠ, পোস্টাফিসে সামান্ত যাহ অবশিষ্ট আছে তাহার পরে একটা দিনও নির্ভর করা চলে না, অথচ, এই রেণু তাহার কাছেই একদিন মানুষ হইয়াছে। কিন্তু সে কথা আজ থাকৃ। তাহারই চিকিৎসায় তাহারই কাছে গিয়া হাত পাতিবে সে কি করিয়া ? যদি না থাকে। সে জানে, যে-বাটতে সে ছেলে পড়ায় তাহারা অত্যন্ত কৃপণ । বন্ধু-বান্ধব অনেক আছে সত্য, কিন্তু সেখানে আবেদন করা নিষ্ফল । অনেক বড়লোক’ গোপনে তাহারই কাছে ঋণী, সে ঋণ নিজে সে না ভুলিলেও তাহারা ভুলিয়াছেন। সহসা মনে পড়িল নতুন-মাকে। কিন্তু দীপশিখা জলিয়াই স্তিমিত হইয়া আসিল— সেখানে দাও বলিয়া দাড়ানের কল্পনাও তাহাকে কুষ্ঠিত করিল। কারণ জিজ্ঞাসা করিলে সে বলিবেই বা কি এবং বলিবে কি করিয়া। এ পথ নয়, কিন্তু আর-একটা পথও তাহার চোখে পড়িল না ; কিন্তু সে বলিলে তো চলিবে না, পথ তাহার চাই-ই—তাহাকে পাইতেই হইবে। দাসী আসিয়া খাবার কথা বলিলে সে নিষেধ করিয়া জানাইল তাহার অন্যত্র নিমন্ত্রণ আছে। এমন প্রায়ই থাকে । ঝি চলিয়া গেলে সে-ও স্বারে চাবি দিল। রাখাল সৌখিন লোক, বেশ-ভূষার সামান্য অপরিচ্ছন্নতাও সহ্য হয় না, কিন্তু আজ সে কথা তাহার মনেই পড়িল না, যেমন ছিল তেমনই বাহির হইয়া গেল । নতুন-মার বাটিতে আসিয়া যখন পৌছিল তখন সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হইয়াছে। সম্মুণে খান কয়েক মোটর দাড়াইয়া, বৃহৎ অট্টালিকা বহুসংখ্যক বিদ্যুৎীপালোকে সমুজ্জ্বল, ఆ