পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় দ্বিতলের বড় ঘরে বাদ্যযন্ত্র বঁাধার্বাধির শব্দ উঠিয়াছে, গৃহস্বামিনী নিরতিশয় ব্যস্ত— ভাগ্যবান আমন্ত্রিতগণের আদর-আপ্যায়নে ক্রাট না ঘটে—রাখালকে দেখিয়া একমুহূৰ্ত্ত থমকিয় দাড়াইয়া প্রশ্ন করিলেন, এতক্ষণে বুঝি আমাদের মনে পড়লো বাবা ? এ-কয়দিন যে নতুন-মাকে সে দেখিয়াছে, এ যেন সে নয়, অভিনব ও বহুমূল্য বেশ-ভূষার পারিপাট্যে র্তাহার বয়সটাকে যেন দশবৎসর পিছনে ঠেলিয়া দিয়াছে, রাখাল কেমন একপ্রকার হতবুদ্ধির মতো চাহিয়া রহিল, সহসা উত্তর দিতে পারিল না। তিনি তখনই আবার বলিলেন, আজ একটু কাজ করে দিতে বলেছিলুম বলে বুঝি একেবারে রাত্রির করে এলে রাজু ? রাখাল নম্রভাবে বলিল, কাজ সারতে দেরি হয়ে গেল মা ! তা ছাড়া আমার না-আসতে পারায় ক্ষতি তো কিছুই হয়নি। না, ক্ষতি হয়নি সত্যি, কিন্তু তখন বলে গেলেই ভালো হোতো । তাহার কণ্ঠস্বরে এবার একটু বিরক্তির স্বর মিশিল । রাখাল বলিল, তখন নিজেও জানতাম না নতুন-মা। তারপরে আর সময় পেলাম না । কে-একজন ডাকিতে সবিতা চলিয়া গেলেন, মিনিট-পাচেক পরে ফিরিয়া আসিয়া দেখিলেন রাখাল তেমনি দাড়াইয়া আছে, বলিলেন, দাড়িয়ে কেন রাজু, ঘরে গিয়ে বোসো গে । রাখাল কিছুতেই সঙ্কোচ কাটাইতে পারে না, কিন্তু তাহার না বলিলেই নয়, শেষে আস্তে আস্তে বলিল, একটা বিশেষ প্রয়োজনে এসেছি নতুন-মা, আমাকে আজ কিছু টাকা দিতে হবে । সবিতা সবিস্ময়ে চাহিলেন, বলিতে বোধ হয় তাহারও বাধিল, কিন্তু বলিলেন, টাকা ? টাকা তো নেই রাজু—যা ছিল ওটা কিনতেই সব খরচ হয়ে গেছে, ও-বেলাই তো শুনে গেলে । কিছুই নেই মা ? না থাকার মধ্যেই। ঘর করতে সামান্য যদি কিছু থাকেও খুজে দেখতে হবে। সে অবসর তো নেই। সারদা নানা কাজে আনাগোনা করিতেছিল, কথাটা শুনিতে পাইয়া কাছে আসিয়া বলিল, আমার কাছে দশ টাকা আছে, এনে দেবো ? রাখাল তাহার মুখের প্রতি ক্ষণকাল চাহিয়া থাকিয়া কহিল, তুমি দেবে ? আচ্ছা, দাও ? সারদা বলিল, মিমুর দিদিমার হাতে টাকা আছে, জিনিস রাখলে ধার দেয়। তার কাছে আমাকে নিয়ে যেতে পারে। সারদা ? ve