পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ যাবে, কাল সকাল যাবে, তারপরে দুপুরবেলায় খাওয়া-দাওয়া সেরে তবে যাবো ? ততক্ষণে যে পাগল হয়ে যাবে সারদা ? এই উৎকণ্ঠার হেতু সারদা বুঝিল না, কিন্তু আর আপত্তিও করিল না—নীরব হইয়া রহিল। যে দরজায় ভাড়াটের যাতায়াত করে সেখানে আসিয়া উভয়ে উপস্থিত হইলেন এবং মিনিট-দুই পরে পথচারী একটা খালি ট্যাক্সি ডাকিয়া উঠিয়া বসিলেন। চোখে পড়িল ঠিক উপরেই—আলোকজ্জল প্রশস্ত কক্ষটি তখন সঙ্গীতে হাস্তে ও আনন্দ-কলরবে মুখর হইয়া উঠিয়াছে। একটি রুমালে বাধা বাগুিল সারদার হাতে দিয়া সবিতা বলিলেন, আঁচলে বেঁধে রাখো তো মা, রাজু আমার হাত থেকে হয়তো নেবে না- তুমি তাকে দিও। দশ মিনিট পরে তাহারা পায়ে স্থাটিয়া রাখালের ঘরের সম্মুখে আসিয়া দেখিলেন বাহির হইতে কপাট বন্ধ, ভিতরে কেহ নাই। দুজনে নিঃশব্দে ফিরিয়া আসিয়া গাড়িতে বসিলেন এবং আরো মিনিট-পাচেক পরে বৌবাজারের একটা বৃহৎ বাটীর সম্মুখে আসিয়া তাতাদের গাড়ি থামিল। নামিতে হইল না, দেখা গেল সে গৃহেরও দ্বার রুদ্ধ। পথের আলো উপরের অবরুদ্ধ জানালায় গিয়া পড়িয়াছে ; সেখানে বড় বড় লাল অক্ষরে নোটশ ঝুলিতেছে—বাড়ি ভাড়া দেওয়া যাইবে। নিদারুণ বিপদের মুখে নিজেকে মুহূর্তে সামলাইয়া ফেলিবার শক্তি সবিতার অসাধারণ। র্তাহার মুখ দিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস পর্যন্ত পড়িল না, গৃহে ফিরিবার আদেশ দিয়া গাড়ির কোণে মাথা রাখিয়া পাষাণ মূৰ্ত্তির ন্যায় বসিয়া রহিলেন। ঠিক কি হইয়াছে অনুমান করা সারদার কঠিন, কিন্তু সে এটা বুঝিল যে, রাখাল মিথ্যা বলিয়া আসে নাই এবং সত্যই ভয়ানক কি একটা ঘটিয়াছে। ফিরিবার পথে সবিতার শিথিল হাতখানি নিজের হাতের মধ্যে টানিয়া লইয়া সারদা জিজ্ঞাসা করিল, এ বাড়ি কার মা ? এই বাড়িই বিক্রী হয়ে গেছে ? হুঁ । এর মেয়ের অসুখের কথাই তিনি বলছিলেন ? জবাব না পাইয়া সে আবার আস্তে আস্তে বলিল, কোথায় তারা আছেন খোজ নেওয়া যে দরকার । কোথায়, কার কাছে খোজ নেবো সারদা ? কাল নিশ্চয় রাখালবাবু আমাকে নিতে আসবেন। কিন্তু যদি না আসে ? আমার বাড়িতে আর যদি সে পা দিতে না চায় ? সারদা চুপ করিয়া বহিল। রাখাল টাকা চাহিয়াছে, তিনি দিতে পারেন নাই ; এইটুকু মাত্রকে উপলক্ষ করিয়া নতুন-মার এতবড় উৎকণ্ঠা আবেগ ও আত্মপ্লানিতে