পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় তাহার মনের মধ্যে অত্যন্ত ধাধা লাগিল ; তাহার সন্দেহ জন্মিল বিষয়টা বস্তুতঃ এই নয়, ভিতরে কি একটা নিষ্ঠুর রহস্য আছে। সবিতা যে রমণীবাবুর পত্নী নয় এ-কথা না জানার ভাণ করিলেও বাটীর সকলেই মনে মনে বুঝিত। তাহারা ভান করিত তয়ে নয়, শ্রদ্ধায়। সবাই জানিত এ কোন বড়ঘরের মেয়ে, বড়ঘরের বেী—আচারে আচরণে বড়, হৃদয় বড়, দয়-দাক্ষিণ্যে ও সৌজন্তে আরও বড়, তাই তাহার এ দুর্ভাগ্য কাহারও উল্লাসের বস্তু ছিল না, ছিল পরিতাপ ও গভীর লজ্জার। দীর্ঘদিন একত্র বাস করিয়া সকলে তাহাকে এতই ভালবাসিত। গলির মোড় ঘুরিতে কোন-একটা দোকানের তীব্র আলোর রেখা আসিয়া পলকের জন্য সবিতার মুখের পরে পড়িল ; সারদা দেখিল, তাতে যেন প্রাণ নাই, হাতের তালুটা হঠাৎ মনে হইল, অতিশয় শীতল, সে সভয়ে একটা নাড়া দিয়া ডাকিল, মা ? কেন মা ? বস্তৃক্ষণ পর্য্যন্ত আর কোন সাড়া নাই—অন্ধকারেও সারদার মনে হইল তাহার চোখ দিয়া জল পড়িতেছে, সে সাহস করিয়া হাত বাড়াইয়া দেখিল তাই বটে। সযত্নে আঁচলে মূছাইয়া দিয়া বলিল, মা, আমি আপনার মেয়ে, আমার আপনার বলতে সংসারে কেউ নেই, আমাকে যা করতে বলবেন আমি তাই করবো । কথাগুলি সামান্তই। সবিতা উত্তরে কিছুই বলিলেন না, শুধু হাত বাড়াইয় তাহাকে বুকের পরে টানিয়া লইলেন। অশ্রবাম্পের নিরুদ্ধ আবেগে সমস্ত দেহটা তাহার বারকয়েক কঁাপিয়া উঠিল, পরে বড় বড় অশ্রুর ফোটা সারদার মাথার উপরে একটি একটি করিয়া ঝরিয়া পড়িতে লাগিল । ছজনে যখন বাড়ি ফিরিয়া আসিলেন তখনও মালতীমালার গান চলিতেছে— র্তাহীদের স্বল্পকালের অনুপস্থিতি কেহ লক্ষ্য করে নাই। সবিতা নীচে হইতে স্নান করিয়া গিয়া উপরে উঠতে ঝি সবিস্ময়ে জিজ্ঞাসা করিল, মা, এখন নেয়ে এলে ? মাথা ঘুরছিল বোধ করি ? ई । তাহলে কাপড় ছেড়ে একটু শুয়ে পড়ে গে মা, সারাদিন যে খাটুনি হয়েচে । সারদা কহিল, এদিকে আমি আছি মা, কোন ভাবনা নেই। দরকার হলেই আপনাকে ডেকে আনবো । সে-রাত্রে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারটা কোনমতে চুকিল, অভ্যাগতেরা একে একে বিদায় লইয়া গেলেন, খাটের শিয়রে বসিয়া সারদা ধীরে ধীরে সবিতার মাথায়, কপালে হাত বুলাইয়া দিতেছিল ; ক্রুদ্ধ পদক্ষেপে রমণাবাবু প্রবেশ করিয়া তিক্তস্বরে কছিলেন, আচ্ছা খেলাই খেললে ! বাড়িতে কোন-একটা কাজ হলে তোমার কোন-একটা ঢং করা চাই। এ তোমার স্বভাব। লোকেরা গেছে—এবার নাও, ছলা-কলা রেখে ❖ፃ