পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ একটু উঠে বসো—একখানা ভালো কাপড় অন্ততঃ পরে বিমলবাবু দেখা করতে আসচেন । এরূপ উক্তি অতাবিত নয়, নূতনও নয়। বস্তুত এমনই কিছু-একটা সবিতা মনে মনে আশঙ্কা করিতেছিলেন, ক্লান্তস্বরে বলিলেন, দেখা কিসের জন্তে ? কিসের জন্তে ! কেন, তারা কি ভিখারী যে খেতে পায় না ? বাড়িতে নেমতন্ন অথচ বাড়ির গিল্পীরই দেখা নেই। বেশ বটে ! সবিতা কছিলেন, নেমতয় হলেই কি বাড়ির গিল্পীর সঙ্গে দেখা করা প্রথা নাকি ? রমণীবাবু বিদ্রুপ করিয়া বলিলেন, প্রথা নাকি ? প্রথা নয় জানি—স্ত্রী হলে আলাপপরিচয় করতে কেউ চায় না—কিন্তু তারা সব জানে। সারদার সম্মুখে সবিতা লজ্জায় মরিয়া গেলেন। সারদা নিজেও পলাইবার চেষ্টা করিল, কিন্তু উঠিতে পারিল না। এদিকে উত্তেজনা পাছে হাকাহাকিতে দাড়ায় এট ভয় সবিতার সবচেয়ে বেশি, তাই নম্রভাবেই কহিলেন, আমি বড় অস্বস্ব, তাকে বলে৷ গে আজ দেখা হবে না । কিন্তু ফল হইল উন্ট। এই সহজ কণ্ঠের অস্বীকারে রমণীবাবু ক্ষেপিয়া গেলেন, চেচাইয়া উঠিলেন—আলবৎ দেখা হবে। সে কোটপতি লোক তা জানো ? বছরে আমার কত টাকার মাল কাটায় খবর রাখো ? আমি বলচি— দরজার বাইরে জুতার শব্দ শুনা গেল এবং চাকরটা সম্মুখে আসিয়া হাত দিয়া দেখাইয়া দিল । সবিতা মাথার কাপড় কপাল পর্য্যন্ত টানিয়া দিয়া উঠিয়া বসিলেন। বিমলবাবু ঘরে ঢুকিয়া নমস্কার করিয়া নিজেই একটা চৌকি টানিয়া লইয়া বসিলেন, শুনতে পেলুম আপনি হঠাৎ বড় অসুস্থ হয়ে পড়েচেন, কিন্তু কালই বোধ হয় আমাকে কানপুরে যেতে হবে, হয়তো আর ফিরতে পারবো না, অমনি বোম্বাই হয়ে জাহাজে সোজা কৰ্ম্মস্থলে রওনা হতে হবে । ভাবলুম, মিনিট-খানেকের জন্যে হলেও একবার সাক্ষাৎ করে জানিয়ে যাই আপনার আতিথ্যে আজ বড় তৃপ্তি লাভ করেচি । সবিতা আস্তে আস্তে বলিলেন, আমার সৌভাগ্য। লোকটির বয়স বছর চল্লিশ, চুলে পাক ধরিতে শুরু করিয়াছে, কিন্তু সযত্ন-সতর্কতায় দেহ স্বাস্থ্য ও রূপে পরিপূর্ণ; কহিলেন, খবর পেলুম রমণীবাবু আজকাল প্রায় অস্বস্থ হয়ে পড়েন, আর আপনার শরীর যে ভালো থাকে না সে তো স্বচক্ষেই দেখতে পাচ্ছি। আপনার আর বছরের ফটোর সঙ্গে আজ মিল খুজে পাওয়া দায়—এমন হয়েচে চেহারা । শুনিয়া পবিতা মনে মনে লজ পাইলেন, বলিলেন, আমার ফটো জাপনি দেখেচেন নাকি ?