পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় দেখেচি বই কি ? আপনাদের একসঙ্গে তোলা ছবি বৰ্মণীবাবু পাঠিয়েছিলেন । তখন থেকেই ভেবে রেখেচি, ছবির মালিককে একবার চোখে দেখবো। সে সাধ আজ মিটলো। চলুন না একবার আমাদের সিঙ্গাপুরে, দিন-কয়েক সমৃদ্ৰ-যাত্রাও হবে, আর দেহটাও একটু বদলাবে। আমার ক্রস স্ট্রীটে একখানি ছোট বাড়ি আছে, তার উপরতলায় দিনরাত সাগরের হাওয়া বয়, সকাল-সন্ধ্যায় স্থৰ্য্যোদয়-স্বৰ্য্যাস্ত দেখতে পাওয়া যায়। রমণীবাবু যেতে রাজি হয়েচেন, শুধু আপনার সম্মতি আদায় করে নিয়ে যেতে পারি তো জানবো এবার দেশে আসা আমার সার্থক হলো । রমণীবাবু উল্লাসভরে বলিয়া উঠিলেন, আপনাকে তে কথা দিয়েচি বিমলবাবু, আমি আসছে সপ্তাহে রওনা হতে পারবো। সমুদ্রের জল-বাতাসের আমার বিশেষ প্রয়োজন। শরীরের স্বাস্থ্য – আপনি বলেন কি ! ও হোলো সকলের আগে । বিমলবাবু কহিলেন, সে সৌভাগ্য হলে হয়তো এক জাহাজেই আমরা যাত্রা করতে পারবো। সবিতার উদ্দেশ্যে স্মিতমুখে বলিলেন, অমুমতি হয়তো উদ্যোগ আয়োজন করি —আমার অফিসেও একটা তার করে দিই—বাড়িটার কোথাও যেন কোন ক্রাট না থাকে ? কি বলেন ? সবিতা মাথা নাড়িয়া মৃদুকণ্ঠে কহিলেন, না, এখন কোথাও যাবার আমার স্ববিধে হবে না। শুনিয়া রমণীবাবু আর একবার গরম হইয়া উঠিলেন—কেন স্ববিধে হবে না শুনি ? লেখা-পড়া কাল-পরশু শেষ হয়ে যাবে, দরওয়ান চাকর বাড়িতে রইলো, ভাড়াটের রইলো, যাবার বাধাটা কি ? না, সে হবে না বিমলবাবু, সঙ্গে নিয়ে আমি যাবোই। না বললেই হবে ? আমার শরীর খারাপ—আমার দেখা-শোনা করবে কে ? আপনি স্বচ্ছন্দে টেলিগ্রাম করে দিন । বিমলবাবু পুনশ্চ সবিতাকেই লক্ষ্য করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, কেমন, দিই একটা তার করে ? জবাব দিতে গিয়া এবার দুজনের চোখাচোখি হইয়া গেল, সবিতা সলজে তৎক্ষণাৎ দৃষ্টি আনত করিয়া কহিলেন, না। আমি যেতে পারবো না । রমণীবাবু ভয়ানক রাগিয়া উঠিলেন—না কেন ? আমি বলচি তোমাকে যেতে হবে । আমি সঙ্গে নিয়ে যাবোই। - বিমলবাবুর মুখ অপ্রসন্ন হইয়া উঠিল, বলিলেন, কি করে নিয়ে যাবেন রমণীবাবু, বেঁধে ? ই, দরকার হয় তো তাই । তা হলে আর কোথাও নিয়ে যাবেন, আমি সে অন্যায়ের ভার নিতে পারবো না। কি জানি, ঠিক প্রবেশমুখেই এই ব্যক্তির উচ্চ কলরব তাহার শ্রুতিগোচর হইয়াছিল o