শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ
লৈগেচে যত আগুন । কিন্তু জানে না কে ? সারদা জানে না, না বাড়ির লোকের অজানা ? একটা মিছে কথা কতদিন চাপা থাকে ? এতে অপমানটা তোমার কি করলুম শুনি ?
সবিতা উঠিয়া বসিলেন। র্তাহার চোখের দৃষ্টি বর্শার ফলার মত তীক্ষ ও কঠিন ; কহিলেন, এ-কথা তুমি ছাড়া আর কোন পুরুষ মুখে আনতেও লজ্জা পেতে কেবল পুরুষমানুষ বলেই, কিন্তু তোমাকে বলা বৃথা । তোমার কথায় আমার অপমান হয়েচে আমি একবারও বলিনি ।
সারদা ভয়ে ব্যতিব্যস্ত হইয়া উঠিল—কি করচেন মা, থামুন। রমণীবাবু কহিলেন, মুখে বলোনি সত্য, কিন্তু মনে ভাবচো তো তাই । সবিতা উত্তর দিলেন, ন, মুখেও বলিনি, মনেও ভাবিনি! তোমার স্ত্রী-পরিচয়ে আমার মর্য্যাদা বাড়ে না সেজবাবু ওতে শুধু চক্ষুলজ্জা বাচে, নইলে সত্যিকারের লজ্জায় ভেতরটা আমার পুড়ে কালি হয়ে ওঠে।
কেন ? কেন শুনি ? কি হবে শুনে ? এ কি বুঝবে যে, আমি যার স্ত্রী তোমরা কেউ তার পায়ের ধূলোর
যোগ্য নও ।
সারদা পুনরায় ভয়ে ব্যাকুল হইয়া উঠিল—এত রাত্তিরে কি করচেন মা আপনার ? দোহাই মা, চুপ করুন।
কিন্তু কেহই কান দিলেন না। রমণীবাবু কড়া গলায় হাকিলেন, সত্যি ? সত্যি নাকি ?
সবিত কহিলেন, সত্যি কি না তুমি নিজে জানো না, সমস্ত ভুলে গেলে ? সেদিন তিনি ছাড়া সংসারে কেউ আমাদের রক্ষা করতে পারতো ? শুধু হাড়-মাস রক্ষে করাই তো নয়, মান-ইজত রক্ষে করেছিলেন । নিজে কত বড় হলে এতখানি ভিক্ষে দিতে পারে কখনো পারো ভাবতে ? আমি তার স্ত্রী। আমার সে ক্ষতি সয়েচে, এটুকু সইবে না ?
রমণীবাবু উত্তর খুজিয়া না পাইয়া যে কথাটি মুখে আসিল তাহাই কহিলেন, তবে বললে তুমি রাগ করতে যাও কিসের জন্যে ?
সবিতা বলিলেন, শুধু আজই তো বলোনি, প্রায়ই বলে থাকে। কথাটা কটু, তাই শুনলে হঠাৎ কানে লাগে, কিন্তু অন্তরটা তখনি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলে ওঠে আমার এই ভালো যে, এ লোকটা আমার কেউ নয়, এর সঙ্গে আমার কোন সত্যিকার সম্বন্ধও নেই। -
সারদা অবাক হইয়া মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। কিন্তু অশিক্ষিত রমণীবাবুর পক্ষে এ উক্তির গভীর তাৎপৰ্য্য বুঝা কঠিন, তিনি শুধু এইটুকু বুঝিলেন যে, ইহা অত্যন্ত রূঢ়
१३
পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/৮২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
