পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় সবিতা বুঝিলেন, সে সে-দিনের তাহার গৃহে নিমন্ত্রণের ব্যাপারটাই ইঙ্গিত করিল। রাখাল বলিতে লাগিল, রেণু সেরে উঠুক, হার না পাই মিষ্টি-মুখ করবার দাবী কিন্তু ছাড়বে না। কিন্তু সেও অন্তদিনের কথা, আজ চলুন একবার রান্নাঘরের দিকে। এ ক'দিন শুধু ভাত খেয়ে আমাদের দিন কেটেচে কেউ গ্রাহ করিনি, আজ কিন্তু তাতে চলবে না, তালো করে খাওয়া চাই । আমুন তার ব্যবস্থা করে দেবেন। চলে বাবা যাই, বলিয়া সবিত উঠিয়া গেলেন। সেখানে দূরে বসিয়া রাখালকে দিয়া তিনি সমস্তই করিলেন এবং যথাসময়ে সকলের ভালো করিয়াই আজ জাহারাদি সমাধা হইল। সবাই জানিত সবিতা এখনো কিছুই খান নাই, কিন্তু খাবার প্রস্তাব কেহ মুখে জানিতেও ভরসা করিল না, কেবল ফকিরের মা নূতন লোক বলিয়া এবং না জানার জন্তই কথাটা একবার বলিতে গিয়াছিল, কিন্তু রাখাল চোখের ইঙ্গিতে নিষেধ করিয়া দিল । সকলের মুখেই আজ একটা নিরুদ্বেগ হাসি-খুণী ভাব, যেন হঠাৎ কোন যাদু-মঙ্গে এ-বাটার উপর হইতে ভূতের উৎপাত ঘুচিয়া গেছে। রেণুর জর নাই, সে আরামে ঘুমাইতেছে, মেঝেয় একটা মাদুর পাতিয়া ক্লাস্ত রাখাল চোখ বুজিয়াছে, মধুর সাড়াশব্দ নাই, সম্ভবতঃ তাহার পেটের ব্যথা থামিয়াছে, নীচে হইতে খন খন ঝন ঝন আওয়াজ আসিতেছে, বোধ হয় ফাটকের মা উচ্ছিষ্ট বাসনগুলা আজ বেলা-বেলি মাজিয়া লইতেছে, সবিতা আসিয়া কর্তার ঘরের দ্বার ঠেলিয়া চৌকাঠের কাছে বসিল —ওগো, জেগে আছো ? ব্ৰজবাবু জাগিয়াই ছিলেন, বিছানায় উঠিয়া বসিলেন । সবিতা কহিলেন, কই আমার জবাব দিলে না ? ব্রজবাবু বলিলেন, তোমাকে রাখাল তখন ডেকে নিয়ে গেল, জবাবটা জেনে নেবার সময় পেলাম না । w কার কাছে জেনে নেবে—আমার কাছে ? ব্ৰজবাবু বলিলেন, আশ্চৰ্য্য হোচ্চো কেন নতুন-বেী, চিরদিন এই ব্যবস্থাই তো হয়ে এসেছে। সেদিন তো রাখালের ঘরে অনেকদিনের মুলতুবি সমস্তার সমাধান করে নিলুম তোমার কাছে। খোজ নিলে শুনতে পাবে তার একটারও অগুথ হয়নি । সবিতা নতমুখে বসিয়া আছেন দেখিয়া তিনি বলিতে লাগিলেন, প্রশ্ন যেদিক থেকেই আম্বক, জবাব দিয়ে এসেচ তুমি-আমি নয়। তার পরে হঠাৎ একদিন আমার লক্ষ্মী-সরস্বতী, দুই-ই করলে অন্তর্ধান, বুদ্ধির থালাটি গেল আমার হারিয়ে, তখন থেকে জবাব দেবার ভার পড়লে আমার নিজের পরে, দিয়েও এসেচি, কিন্তু তার দুর্গতি যে কি সে তো স্বচক্ষেই দেখতে পাচ্চে নতুন-বোঁ । 切”●