পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/১০৪

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ এই ত বলচ ? পারে বটে, কিন্তু সবাই পারে ? তুমি পারে? যে পারে না, তার ভারের ওজনটা একবার ভেবে দেখ দিকি । তার নিন্দিত জীবন ঘরের কোণে নিরালায় কাটাবার জো নেই, তাকে সংসারের মাঝখানে দ্বন্দ্ব-যুদ্ধে নেমে আসতে হবে, অবিচার ও অপযশের বোঝা একাকী নিঃশব্দে বইতে হবে, তার একান্ত স্নেহের পাত্রী, তার ভাবী সস্তানের জননীকে বিরুদ্ধ সমাজের সমস্ত অমৰ্য্যাদা ও অকল্যাণ থেকে বাচিয়ে রাখতে হবে—সে কি সোজা দুঃখ তুমি মনে কর ? আবার সকলের চেয়ে বড় দুঃখ এই যে, সে ষে অনায়াসে এই দুঃখের বোঝা নামিয়ে দিয়ে সরে যেতে পারে, তার এই সৰ্ব্বনেশে বিকট প্রলোভন থেকে অহোরাত্র আপনাকে আপনি বাচিয়ে চলার গুরুভারও তাকেই বয়ে বেড়াতে হবে। দুঃখের মানদণ্ডে এই আত্মোৎসর্গের সঙ্গে ওজন সমান রাখতে যে প্রেমের দরকার, পুরুষমানুষে আপনার ভিতর থেকে যদি বার করতে না পারে, ত কোন মেয়েমানুষেরই সাধ্য নয় তা পূর্ণ করে দেয়। কথাটা এদিক হইতে কোনদিন এমন করিয়া ভাবি নাই। রোহিণীর সেই সাদাসিধা চুপচাপ ভাব, তার পরে অভয়া যখন তাহার স্বামীর ঘরে চলিয়া গেল, তখন তাহার সেই শান্ত মুখের উপর অপরিসীম বেদন নি:শবে বহন করিবার যে ছবি স্বচক্ষে দেখিয়াছিলাম, তাহাই চক্ষের পলকে রেখায় রেখায় আমার মনের মধ্যে ফুটিয়া উঠিল। কিন্তু মুখে বলিলাম, চিঠিতে কিন্তু এক অভয়ার উদ্দেশেই পুপাঞ্জলি পাঠিয়েছিলে। রাজলক্ষ্মী কহিল, র্তার প্রাপ্য আজও তাকে দিই। কেন না আমার বিশ্বাস, যাকিছু পাপ, যা-কিছু অপরাধ সে তার অস্তরের তেজে দগ্ধ হয়ে তাকে শুদ্ধ নিৰ্ম্মল করে দিয়েচে । তা নইলে ত আজ তিনি নিতান্ত সাধারণ স্ত্রীলোকের মতই তুচ্ছ, হীন হয়ে যেতেন । তীন কেন ? রাজলক্ষ্মী বলিল, বেশ স্বামী-পরিত্যাগের পাপের কি সীমা আছে না-কি ? সে পাপ ধ্বংস করবার মত আগুন তার মধ্যে না থাকলে ত আজ তিনি— কহিলাম, আগুনের কথা থাক্ । কিন্তু তার স্বামীটি যে কি পদার্থ, সে একবার ভেবে দেখ । রাজলক্ষ্মী বলিল, পুরুষমানুষ চিরকালই উচ্ছম্বল, চিরকালই কিছু কিছু অত্যাচারী ; কিন্তু তাই বলে ত স্ত্রীর স্বপক্ষে পালিয়ে যাবার যুক্তি খাটতে পারে না। মেয়েমামুষকে সহ্য করতেই হয়। নইলে ত সংসার চলতে পারে না। কথা শুনিয়া আমার সমস্তই গোলমাল হইয়া গেল। মনে মনে কছিলাম, মেয়েমানুষের এ সেই সনাতন দাসত্ত্বের সংস্কার! একটু অসহিষ্ণু হইয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, এতক্ষণ তা হলে তুমি আগুন আগুন কি বকৃছিলে ? 2}r