পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ শত কষ্ট সইতে পারি, কিন্তু তোমরা পার কি ! এই যে সন্ধ্যা হতে না হতেই ক্ষিদেয় অন্ধকার দেখছিলে ? বলিলাম, তা হতে পারে, কিন্তু কষ্ট সইতে না পারাটা আমাদেরও গৌরবের কথা नों | রাজলক্ষ্মী ঘাড় নাড়িয়া কহিল না, এতে আমাদের এতটুকু অগৌরব নেই। তোমরাত আমাদের মত দাসীর জাত নয় যে, কষ্ট সহ করতে যাবে। লজ্জার কথা আমাদেরই যদি না পারি। কহিলাম, এ হ্যায়শাস্ত্র তোমাকে শেখালে কে ? কাশীর গুরুদেব ? রাজলক্ষ্মী আমার মুখের অত্যন্ত সন্নিকটে ঝুকিয়া ক্ষণকাল স্থির হইয়া রহিল, পরে মৃদু হাসিয়া বলিল, আমার যা-কিছু শিক্ষণ সে তোমারই কাছে। তোমার চেয়ে বড় গুরু আর আমার নেই। বলিলাম, তাহলে গুরুর কাছে ঠিক উল্টোটাই শিখে বেথেচ। আমি কোনদিন বলিনে যে, তোমরা দাসীর জাত। বরঞ্চ এই কথাই চিরদিন মনে করি যে, তোমরা তা নও। তোমরা কোন দিক থেকে আমাদের চেয়ে এক তিল ছোট নও। রাজলক্ষ্মীর চোখ দুটি সহসা ছলছল করিয়া উঠিল। বলিল, সে আমি জানি । আর জানি বলেই ত এ কথা তোমার কাছে শিখতে পেরেচি। তোমার মত সবাই যদি এমনি করে ভাবতে পারত, তাহলে পৃথিবী স্বদ্ধ সমস্ত মেয়ের মুখেই এ কথা শুনতে পেতে। কে বড় কে ছোট, এ সমস্তাই কখনো উঠত না । অর্থাৎ এ সত্য নির্বিচারে সবাই মেনে নিত ? রাজলক্ষ্মী কহিল, হ্যা। আমি তখন হাসিয়া কহিলাম, ভাগ্যে পৃথিবীমৃদ্ধ মেয়েরা তোমার সঙ্গে একমত নয়, তাই রক্ষা। কিন্তু আপনাদের এত হীন মনে করতে লজ্জা করে না ? আমার উপহাস রাজলক্ষ্মী লক্ষ্য করিল কি না সন্দেহ। অত্যন্ত সহজভাবে কহিল, কিন্তু এর মধ্যে ত কোন হীনতা নেই। আমি কহিলাম, তা বটে। আমরা প্রভু, তোমরা দাসী এই সংস্কারটাই এ দেশের মেয়েদের মনে এমনি বদ্ধমূল যে, এর হীনতাটাও আর আমাদের চোখে পড়ে না। বোধ করি এই পাপেই পৃথিবীর সকল দেশের মেয়ের চেয়ে তোমরাই আজ সত্যিসত্যি ছোট হয়ে গেছ । রাজলক্ষ্মী হঠাৎ শক্ত হইয়া বসিয়া, দুই চক্ষু দীপ্ত করিয়া বলিল, না, সে জন্তে নয়। তোমাদের দেশের মেয়েরা নিজেদের ছোট মনে ক’রে ছোট হয়ে যায়নি,তোমরাই তাদের ছোট মনে ক’রে ছোট করে দিয়েচ, নিজেরাও ছোট হয়ে গেছ । এই সত্যি কথা । কথাটা অকস্মাৎ যেন নূতন করিয়া বাজিল। ইহার মধ্যে হেঁয়ালি যেটুকু ছিল, } Sk