পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/১২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ তামাশা করবার কথা আমি বলিনি। বাড়ির গিল্পী সকলের চেয়ে কম, সকলের চেয়ে খারাপ খায় ! অনেক সময়ে চাকরের চেয়েও । অনেক সময়ে চাকরদের চেয়েও বেশী খাটতে হয় । কিন্তু তার দুঃখে আকুল হয়ে কেঁদে না বেড়িয়ে আমাদের বরঞ্চ অমনি দাসীর মতই থাকতে দাও, কিন্তু অন্য দেশের রাণী ক’রে তোলবার চেষ্টা ক’রে না, আমি এই কথাটাই তোমাকে বলচি । বলিলাম, তর্কশাস্ত্রের মাথায় পা দিয়ে ডোবাবার জে করে তুলেচ বটে, কিন্তু আমিও যে শাস্ত্রমতে তর্ক করবার ঠিক বাগ পাচ্চিনে, তা মানচি । সে কহিল, তর্ক করবার কিছু নেই। বলিলাম, থাকলেও সে শক্তি নেই, ভয়ানক ঘুম পাচ্চে। কিন্তু তোমার কথাট একরকম বুঝতে পেরেচি। f রাজলক্ষ্মী একটুখানি চুপ করিয়া থাকিয় বলিল, আমাদের দেশে যে জন্যেই হোক ছোট-বড় উচু-নীচু সকলের মধ্যেই টাকার লোভটা ভয়ানক বেড়ে গেছে। কেউ আর অল্পে সন্তুষ্ট হতে জানে না—চায় না। এতে যে কত অনিষ্ট হয়েচে, সে আমিই টের পেয়েচি । \ কহিলাম, কথাটা সত্যি, কিন্তু তুমি টের পেলে কেমন করে । রাজলক্ষ্মী কহিল, টাকার লোভেই ত আমাদের এই দশা। কিন্তু আগেকার কালে বোধ হয় এত লোভ ছিল না । বলিলাম, এ ইতিহাসটা ঠিক জানিনে। সে কহিতে লাগিল, কখখনো ছিল না। সেখানে কথখনো মায়ে টাকার লোভে মেয়েকে এ পথে পাঠাতে না । তখন ধর্মভয় ছিল। আজও ত আমার টাকার অভাব নেই, কিন্তু আমার মত দুঃখী কি কেউ আছে ? পথের ভিক্ষুক যে সেও বোধ হয় আজ আমার চেয়ে ঢের ঢের বেশী মুখী । তাহার হাতটা নিজের হাতের মধ্যে টানিয়া লইয়া বলিলাম, তোমার কি সত্যিই এত কষ্ট ? রাজলক্ষ্মী ক্ষণকাল মৌন থাকিয়া আঁচল দিয়া চোখদুটি একবার মুছিয়া লইয়া বলিল, আমার কথা আমার অন্তৰ্য্যামীই জানেন । অতঃপর উভয়েই স্তব্ধ হইয়া রহিলাম। গাড়ির গতি মন্দীভূত হইয়া ক্রমশঃ একটা ছোট স্টেশনে আসিয়া থামিল। খানিক পরে আবার চলিতে শুরু করিলে বলিলাম, কি করলে তোমার বাকী জীবনটা স্বখে কাটে, আমাকে বলতে পারো ? রাজলক্ষ্মী কহিল, সে আমি ভেবে দেখেচি। আমার সমস্ত টাকাকড়ি যদি কোন রকমে চলে যায়, কিছু না থাকে-একেবারে নিরাশ্রয়, তা হলেই— 0ג ל