পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/১২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ পিয়াৰী এবার হাসিয়া ফেলিয়া বলিল, তার মানে ভবিষ্যতের আশায় আমাকেই খাওয়া-পর দিয়ে এদের বঁচিয়ে রাখতে হয় ; বেঁচে থাকলে তবে ত পরে দেবে। এটা আর বুঝতে পারো না ? আমি হাসিয়া বলিলাম, পারি বই কি। এমনিধারা ভবিষ্যতের আশায় কত লোককেই যে তোমাকে নিঃশবে অন্ন-বস্ত্র যোগাতে হয়, আমি তাই শুধু ভাবি ! তা ছাড়া দু-একজন আমার কুটুম্বও আছেন । তাই নাকি ? কিন্তু জানলে কি ক’রে ? পিয়ারী একটুখানি শুষ্ক হাসি হাসিয়া কহিল, মায়ের সঙ্গে এসে এই কাশীতেই যে আমার মরণ হয়েছিল, সে বুঝি তোমার মনে নেই? তখন অসময়ে ধারা আমাদের সদগতি করেছিলেন, তাদের সে উপকার ত প্রাণ থাকতে ভোলা যায় না কিনা ! চুপ করিয়া রহিলাম। পিয়ারী বলিতে লাগিল, বড় দয়ার শরীর এদের। তাই কাছে এনে একটু কড়ানজরে রেখেচি, যাতে লোকের আর বেশী উপকার করবার স্বযোগ না পান । তাহার মুখের প্রতি চাহিয়া হঠাৎ আমার মুখ দিয়া বাহির হইয়া গেল, তোমার বুকের ভেতরটায় কি আছে আমার মাঝে মাঝে চিরে দেখতে ইচ্ছা করে রাজলক্ষ্মী । মলে দেখো! আচ্ছা, ঘরে গিয়ে একটুখানি শোও গে যাও। আমার খাবার তৈরি হলে তোমাকে তুলব অখন। বলিয়া সে হাত দিয়া ঘরটা দেখাইয়া সিড়ি দিয়া নীচে নামিয়া গেল । আমি অনেকক্ষণ সেইখানেই চুপ করিয়া দাড়াইয়া রছিলাম। তাহার হৃদয়ের আজ যে বিশেষ কোন নূতন পরিচয় পাইলাম তাহা নহে, কিন্তু আমার নিজের হৃদয়ের এই সামান্ত কাহিনীটা একটা নুতন আবর্তের স্বষ্টি করিয়া দিয়া গেল। রাত্রে পিয়ারী কহিল, তোমাকে বৃথা কষ্ট দিয়ে এতদূর নিয়ে এলুম! গুরুদেব তীর্থভ্রমণে বেরিয়ে গেছেন, তাকে তোমাকে দেখাতে পারলুম না। বলিলাম, সে জন্যে আমি কিছুমাত্র দুঃখিত নই। আবার কলকাতায় ফিরে যাবে ত ? পিয়ারী ঘাড় নাড়িয়া জানাইল, হা । কহিলাম, আমার সঙ্গে যাবার কি কোন আবশ্বক আছে ? না থাকে ত আমি আর একটু পশ্চিম থেকে ঘুরে আসতে চাই। পিয়ারী বলিল, বন্ধুর বিয়ের ত এখনো দেরি আছে, চল না, আমিও প্রয়াগে একবার স্নান করে আসি । 别 একটু মুস্কিলে পড়িলাম ! আমার জ্ঞাতি-সম্পর্কের এক খুড়ে সেখানে কর্যোপলক্ষে বাস করিতেন, মনে করিয়াছিলাম, তার বাসায় গিয়া উঠিব। তা ছাড়া আরও কয়েকটি পরিচিত আত্মীয়-বন্ধুও সেইখানেই থাকিতেন । $$