পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঐকান্ত এই বিদ্রপের কোন উত্তর পিয়ারী সহসা দিতে পারিল না, আরক্তযুখে চুপ করিয়া দাড়াইয়া রহিল। সে যে প্রাণপণে আপনাকে সামলাইবার চেষ্টা করিতেছে, তাহা স্পষ্ট বুঝিতে পারিলাম। বাহির হইতে গাড়োয়ান উচ্চৈস্বরে বিলম্বের কারণ জিজ্ঞাসা করিল। আমি নিঃশব্দে ব্যাগটা হাতে তুলিয়া লইতেই এবার পিয়ারী ধপ, করিয়া আমার পায়ের কাছে বসিয়া পড়িয়া রুদ্ধকণ্ঠে বলিয়া উঠিল, আমি যে সত্যিকার অপরাধ কখনো করতেই পাবিনে, তা জেনেও যদি শাস্তি দিতে চাও, নিজ হাতে দাও, কিন্তু এই একবাড়ি লোকের কাছে আমার মাথ। হেঁট করে দিও না । আজ এমন করে তুমি চলে গেলে আমি কারও কাছে আর মুখ তুলে দাড়াতে পারবো না । হাতের ব্যাগটা রাখিয়া দিয়া একটা চৌকিতে বসিয়া পড়িয়া কহিলাম, আচ্ছা আজ তোমার-আমার একটা শেষ বোঝাপড়া হয়ে যাকৃ। তোমার আজকের আচরণ আমি মাপ করলুম। কিন্তু আমি অনেক ভেবে দেখেচি, দুজনের দেখা-সাক্ষাৎ হওয়া আর চলবে না। পিয়ারী তাহার একান্ত উৎকণ্ঠিত মুখ আমার মুখের প্রতি তুলিয়া সভয়ে প্রশ্ন করিল, কেন ? কহিলাম, অপ্রিয় সত্য সহ করতে পারবে ? পিয়ারী ঘাড় নাড়িয়া অফুটে বলিল, পারবো। কিন্তু ব্যথা একজন সহিতে স্বীকার করিলেই কিছু ব্যথা দেওয়ার কাজটা সহজ হইয়া উঠে না। আমাকে অনেকক্ষণ স্তব্ধ হইয়া বসিয়া ভাবিতে হইল। কিন্তু আজ যে কোনমতেই আমি সঙ্কল্প ত্যাগ করিব না, তাহ স্থির করিয়াছিলাম। তাই অবশেষে ধীরে ধীরে বলিলাম, লক্ষ্মী, তোমার আজকের ব্যবহার ক্ষমা করা যত কঠিনই হোক, আমি করলুম। কিন্তু নিজে তুমি এ লোভ কিছুতেই ত্যাগ করতে পারবে না। তোমার অনেক টাকা, অনেক রূপ-গুণ । অনেকের ওপর তোমার অসীম প্রভূত্ব। সংসারে এর চেয়ে বড় লোভের জিনিস আর নেই। তুমি আমাকে ভালবাসতে পারে, শ্রদ্ধা করতে পারে, আমার জন্যে অনেক দুঃখ সইতেও পারে, কিন্তু এ মোহ কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারবে না। রাজলক্ষ্মী মৃদুকণ্ঠে কহিল, অর্থাৎ এরকম কাজ আমি মাঝে মাঝে করবই ? প্রত্যুত্তরে আমি শুধু মৌন হুইয়া রছিলাম। সে নিজেও কিছুক্ষণ নীরবে থাকিয়া বলিল, তার পরে ? কহিলাম, তার পরে একদিন খেলাঘরের মত সমস্ত ভেঙ্গে পড়বে। সে দিনের সেই হীনতা থেকে আজ তুমি আমাকে চিরদিনের মত রেহাই দাও-তোমার কাছে আমার এই প্রার্থনা । సిఫి: aリー》も