পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ পিয়ারী বহুক্ষণ নতমুখে নিঃশৰে বসিয়া রহিল। তার পরে যখন মূখ তুলিল, দেখিলাম, তাহার দু'চোখ বহিয়া জল পড়িতেছে। আঁচলে মুছিয়া ফেলিয়া জিজ্ঞাসা করিল, তোমাকে কি কখনো কোন ছোট কাজে আমি প্রবৃত্তি দিয়েছি ? এই বিগলিত অশ্রধারা আমার সংযমের ভিত্তিতে গিয়া আঘাত করিল ; কিন্তু বাহিরে তাহার কিছুই প্রকাশ পাইতে দিলাম না। শাস্ত ও দৃঢ়তার সহিত বলিলাম, না, কোন দিন নয়। তুমি নিজে ছোট নয়, ছোট কাজ তুমি নিজেও কখনো করতে পারো না, অপরকে করতে দিতে পারো না । একটু থামিয়া কহিলাম, কিন্তু লোকে ত মনসা পণ্ডিতের পাঠশালার সেই রাজলক্ষ্মীটিকে চিনবে না, তারা চিনবে শুধু পাটনার প্রসিদ্ধ পিয়ারী বাইজাকে। তখন সংসারের চোখে যে কত ছোট হয়ে যাবো, সে কি তুমি দেখতে পাচ্ছে না ? সে তুমি কেমন করে বাধা দেবে বল ত ? রাজলক্ষ্মী একটা নিশ্বাস ফেলিয়া কহিল, কিন্তু তাকে ত সত্যিকারের ছোট হওয়া বলে না ! বলিলাম, ভগবানের চক্ষে না হতে পারে, কিন্তু সংসারের চক্ষুও ত উপেক্ষা করবার বস্তু নয় লক্ষ্মী ! রাজলক্ষ্মী বলিল, কিন্তু তার চক্ষুকেই ত সকলের আগে মানা উচিত। কহিলাম, এক হিসাবে সে কথা সত্যি। কিন্তু তার চক্ষু ত সৰ্ব্বদাই দেখা যায় না ! যে দৃষ্টি সংসারের দশজনের ভেতর দিয়ে প্রকাশ পায়, সেও ত তারই চক্ষের দৃষ্টি রাজলক্ষ্মী ! তাকেও ত অস্বীকার করা অন্যায় । সেই ভয়ে আমাকে তুমি জন্মের মত ত্যাগ করে চলে যাবে ? কহিলাম, আবার দেখা হবে। তুমি যেখানেই থাকো না কেন বৰ্ম্ম যাবার পূৰ্ব্বে আমি আর একবার দেখা করে যাবে। রাজলক্ষ্মী প্রবলবেগে মাথা নাড়িয়া অশ্র-বিকৃতকণ্ঠে বলিয়া উঠিল, যাবে যাও। কিন্তু তুমি আমাকে যাই ভাবে না কেন, আমার চেয়ে আপনার লোক তোমার আর নেই। সেই আমাকেই ত্যাগ করে যাওয়া দশের চক্ষে ধৰ্ম্ম, একথা আমি কখনো মানবো না । বলিয়া দ্রুতবেগে ঘর ছাড়িয়া চলিয়া গেল । ঘড়ি খুলিয়া দেখিলাম, এখনো সময় আছে, এখনো হয় ত একটার ট্রেন ধরিতে পারি। নিঃশব্দে ব্যাগটি তুলিয়া লইয়া ধীরে ধীরে নামিয়া গিয়া গাড়িতে গিয়া বসিলাম ! বকৃশিশের লোভে গাড়ি প্রাণপণে ছুটিয়া স্টেশনে পৌছাইয়া দিল। কিন্তু সেই মুহূর্তেই পশ্চিমের ট্রেন প্লাটফরম ছাড়িয়া বাহির হইয়া গেল। খবর লইয়া জানিলাম 9११