পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/১৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঐকাত্ত গায়ের লোক ভাবিতেই পারে না ; স্বতরাং আমি সে চেষ্টাও করিলাম না। প্রথম হইতে স্থির করিয়াছিলাম এ-কথা রাজলক্ষ্মীকে জানাইব না। একটু স্বস্থ হইলেই যাহা হয় করিব—সম্ভবতঃ অভয়াকে লিখিয়া টাকা আনাইব, মনের মধ্যে এই সঙ্কল্প ছিল, কিন্তু সে সময় মিলিল না। সহসা যত্বের স্বর তারা হইতে উদারায় নামিয়া পড়িতেই বুঝিলাম, যেমন করিয়া হোক, আমার বিপদটা বাটীর ভিতরে আর অবিদিত নাই । অবস্থাটা সংক্ষেপে জানাইয়া রাজলক্ষ্মীকে একখানা চিঠি লিখিলাম বটে, কিন্তু নিজেকে এত হন এত অপমানিত মনে হইতে লাগিল যে, কোনমতেই পাঠাইতে পারিলাম না, ছিড়িয়া ফেলিয়া দিলাম। পরদিন এমনি কাটিল। কিন্তু তাহার পরে আর কিছুতেই কাটিতে চাহিল না। সেদিন কোনদিকে চাহিয়া আর কোন পথ দেখিতে না পাইয়া অবশেষে একবারে মরিয়া হইয়াই কিছু টাকার জন্য রাজলক্ষ্মীকে সমস্ত অবস্থা জানাইয়া খান-দুই পত্র লিখিয়া পাটনা ও কলিকাতার ঠিকানায় পাঠাইয়া দিলাম। সে যে টাকা পাঠাইবেই তাহাতে কিছুমাত্র সন্দেহ ছিল না, তথাপি সেদিন সকাল হইতেই কেমন যেন উৎকণ্ঠিত সংশয়ে ডাক-পিয়নের অপেক্ষায় সম্মুখের খোলা জানল দিয়া পথের উপর দৃষ্টি পাতিয়া উন্মুখ হইয়া রহিলাম। সময় বহিয়া গেল। আজ আর তাহার আশা নাই, মনে করিয়া পাশ ফিরিয়া শুইবার উপক্রম করিতেছি, এমনি সময়ে দূরে একখানা গাড়ির শব্দে চকিত হইয়া বালিশে ভর দিয়া উঠিয়া বসিলাম। গাড়ি আসিয়া ঠিক স্বমুখেই থামিল। দেখি, কোচমানের পাশে বসিয়া রতন। সে নীচে নামিয়া গাড়ির দরজা খুলিয়া দিতেই যাহা চোখে পড়িল, তাহা সত্য বলিয়া প্রত্যয় করা কঠিন। প্রকাশ দিনের বেলায় এই গ্রামের পথের উপর রাজলক্ষ্মী আসিয়া দাড়াইতে পারে, তাহা চিন্তার অতীত । রতন কহিল, ঐ যে বাবু! রাজলক্ষ্মী শুধু একবার আমার দিকে চাহিয়া দেখিল মাত্র। গাড়োয়ান কহিল, ম, দেরি হবে ত ? ঘোড়া খুলে দিই ? একটু দাড়াও, বলিয়া সে অবিচলিত ধীর পদক্ষেপেই আমার ঘরে আসিয়া প্রবেশ করিল। প্রণাম করিয়া পায়ের ধূলা মাথায় লইয়া হাত দিয়া আমার কপালের, বুকের উত্তাপ অনুভব করিয়া বলিল, এখন আর জর নাই। ও-বেলায় সাতটার গাড়িতে স্বাওয়া চলবে কি ? ঘোড়া খুলে দিতে বলব ? আমি অভিভূতের ন্যায় তাহার মুখের পানে চাহিয়াই ছিলাম। কহিলাম, এই ছুদিন জরটা বন্ধ হয়েছে। কিন্তু আমাকে কি আজই নিয়ে যেতে চাও? ১২৫