পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/১৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ হুলস্থল পড়িয়া গেল। বড় তরফের কর্তা বেশী ঘোষাল বুড়োর মৃত্যুতে গোপনে আরামের নিঃশ্বাস ফেলিয়া বাড়ি ফিরিয়া আসিলেন এবং আরো গোপনে দল পাকাইতে লাগিলেন কি করিয়া খুড়োর আগামী শ্রাদ্ধের দিনটা পণ্ড করিয়া দিবেন। দশ বৎসর খুড়ে-ভাইপোর মুখ দেখাদেখি ছিল না। বহু বৎসর পূৰ্ব্বে তারিণীর গৃহ শূন্ত হইয়াছিল। সেই অবধি পুত্র রমেশকে তাহার মামার বাড়ি পাঠাইয়া দিয়া তারিণী বাড়ির ভিতরে দাস-দাসী এবং বাহিরে মোকদ্দমা লইয়াই কাল কটাইতেছিলেন। রমেশ রুড়কি কলেজে এই দুঃসংবাদ পাইয়া পিতার শেষ কাৰ্য্য সম্পন্ন করিতে স্বদীর্ঘ কাল পরে কাল অপরাত্ত্বে তাহার শূন্ত গৃহে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছিল। কৰ্ম্মবাড়ি। মধ্যে শুধু দু’টো দিন বাকী। বৃহস্পতিবার রমেশের পিতৃশ্ৰাদ্ধ। দুই-একজন করিয়া ভিন্ন গ্রামের মুরুব্বির উপস্থিত হইতেছেন। কিন্তু নিজেদের কুঁয়াপুরের কেন যে কেহ আসে না রমেশ তাহা বুঝিয়াছিল এবং হয়ত শেষ পৰ্য্যন্ত কেহ আসিবে না তাহাও জানিত । শুধু ভৈরব আচাৰ্য্য ও তাহার বাড়ির লোকেরা আসিয়া কাজকর্ধে যোগ দিয়াছিল। স্বগ্রামস্থ ব্রাহ্মণদিগের পদধূলির আশা না থাকিলেও উদ্যোগ-আয়োজন রমেশ বড়লোকের মতই করিয়াছিল। আজ অনেকক্ষণ পৰ্য্যন্ত রমেশ বাড়ির ভিতরে কাজকর্মে ব্যস্ত ছিল। কি জন্যে বাহিরে আসিতেই দেখিল, ইতিমধ্যে জন-দুই প্রাচীন ভদ্রলোক আসিয়া বৈঠকখানার বিছানায় সমাগত হইয়৷ ধুমপান করিতেছেন। সম্মুখে আসিয়া সবিনয়ে কিছু বলিবার পূৰ্ব্বেই পিছনে শব্দ শুনিয়া ফিরিয়া দেখিল, এক অতি বৃদ্ধ পাচ-ছটি ছেলেমেয়ে লইয়া কাসিতে কাসিতে বাড়ি ঢুকিলেন। তাহার কাধে মলিন উত্তরীয়, নাকের উপর একজোড়া ভাটার মত মস্ত চশমা—পিছনে দড়ি দিয়া বাধা। সাদা চুল, সাদা গোফ তামাকের {ায় তাম্রবর্ণ। অগ্রসর হইয়া আসিয়া সে সেই ভীষণ চশমার ভিতর দিয়া রমেশের মুখের দিকে মুহূৰ্ত্তকাল চাহিয়া বিনা বাক্যব্যয়ে কাদিয়া ফেলিলেন। রমেশ চিনিল ন! ইনি কে, কিন্তু যেই হোন ব্যস্ত হইয়া কাছে আসিয়া তাহার হাত ধরিতেই সে ভাঙ্গা গলায় বলিয়া উঠিল, না বাবা রমেশ, তারিণী যে এমন করে ফাকি দিয়ে পালাবে, তা স্বপ্নেও জানিনে, কিন্তু আমারও এমন চাটুয্যেবংশে জন্ম নয় যে, কারু ভয়ে মুখ দিয়ে মিথ্যা কথা বেরুবে । আসবার সময় তোমার বেশী ঘোষালের মুখের সামনে বলে এলুম, আমাদের রমেশ যেমন শ্রাদ্ধের আয়োজন করচে, এমন করা চুলোয় যাক, এ অঞ্চলে কেউ চোখেও দেখেনি। একটু থামিয়া বলিল, আমার নামে অনেক শালা অনেক রকম করে তোমার কাছে লাগিয়ে যাবে বাবা, কিন্তু এটা নিশ্চয় জেনে, এই ধৰ্ম্মদাস শুধু ধর্থেরই দাস, আর কারো নয়। এই বলিয়। বৃদ্ধ সত্যভাষণের সমস্ত পৌরুষ আত্মসাৎ করিয়া গোবিন্দ গাঙ্গুলীর হাত হইতে কাট ছিনাইয়া লইয়া তাহাতে এক টান দিয়াই প্রবলবেগে কাসিয়া ফেলিল । "ללא צ