পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/১৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পল্লী-সমাজ জ্যাঠাইমার বিরক্তি রমেশ লক্ষ্য করিল, কিন্তু বিচলিত হইল না। খানিক পরে আস্তে আস্তে বলিল, আমি জানতুম জ্যাঠাইমা, যা অন্যায় নয়, আমার সে কাজে তুমি প্রসন্নমনে আমাকে আশীৰ্ব্বাদ করবে। আমার— তাহার কথাটা শেষ হইবার পূৰ্ব্বেই বিশ্বেশ্বরী বাধা দিয়া বলিয়া উঠিলেন, কিন্তু এটাও ত তোমার জানা উচিত ছিল রমেশ যে, আমার সস্তানের বিরুদ্ধে আমি যেতে পারব না ? কথাটা রমেশকে আঘাত করিল। কারণ, মুখে সে যাই বলুক, কেমন করিয়া তাহার সমস্ত অন্তঃকরণ কাল হইতে এই জ্যাঠাইমার কাছে সন্তানের দাবী করিতেছিল, এখন দেখিল, এ দাবীর অনেক উৰ্দ্ধে তার আপন সন্তানের দাবী জায়গা জুড়িয়া আছে। সে ক্ষণকালমাত্র চুপ করিয়া থাকিয়াই দাড়াইয়া চাপা অভিমানের স্বরে বলিল, কাল পর্য্যস্ত তাই জানতুম জ্যাঠাইমা ! তাই তোমাকে তখন বলেছিলুম, বা পারি আমি একলা করি, তুমি এসো না ; তোমাকে ডাকবার সাহসও আমায় হয়নি। এই ক্ষুণ্ণ অভিমান জ্যাঠাইমার অগোচর রহিল না । কিন্তু আর জবাব দিলেন না, অন্ধকারে চুপ করিয়া বসিয়া রহিলেন। খানিক পরে রমেশ চলিয়া যাইবার উপক্রম করিতেই বলিলেন, তবে একটু দাড়াও বাছ, তোমার ভাড়ার-ঘরের চাবিটা এনে দিই, বলিয়। ঘরের ভিতর হইতে চাবি আনিয়া রমেশের পায়ের কাছে ফেলিয়া দিলেন। রমেশ কিছুক্ষণ স্তব্ধভাবে দাড়াইয়া থাকিয়া অবশেষে গভীর একটা নিশ্বাস ফেলিয়া চাবিটা তুলিয়া লইয়া আস্তে আস্তে চলিয়া গেল। ঘণ্টাকয়েক মাত্র পূৰ্ব্বে সে মনে মনে বলিয়াছিল, আর আমার ভয় কি, আমার জ্যাঠাইম আছেন। কিন্তু একটা রাজিও কাটিল না, তাহাকে আবার নিশ্বাস ফেলিয়া বলিতে হইল, না, আমার কেউ নেই— জ্যাঠাইমাও আমাকে ত্যাগ করেচেন। 8 বাহিরে এইমাত্র শ্রাদ্ধ শেষ হইয়া গিয়াছে। আসন হইতে উঠিয় রমেশ অভ্যাগতদিগের সহিত পরিচিত হইবার চেষ্টা করিতেছে—বাড়ির ভিতরে আহারের জন্য পাতা পাতিবার আয়োজন হয়তেছে, এমন সময় একটা গোলমাল ইকোহাকি শুনিয়া রমেশ ব্যস্ত হইয়া ভিতরে আসিয়া উপস্থিত হইল। সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই আসিল ! ভিতরে রন্ধনশালার কপাটের একপাশে একটি পচিশ-ছাব্বিশ বছরের বিধৰা মেয়ে জড়সড় হইয়৷ পিছন ফিরিয়া দাড়াইয়া আছে এবং আর একটি প্রৌঢ়৷ $ two ২য়-=ং •