পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/১৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ করতে অনেক জায়গাতেই তো শাই—অনেকে অনুগ্রহ করেন। আমি বেশ দেখেচি, তোমাদের ছেলে-ছোকরাদের দয়-ধৰ্ম্ম আছে—নেই কেবল বুড়ো ব্যাটাদের। এরা একটু বাগে পেলে আর একজনের গলায় পা দিয়ে জিভ বার না করে আর ছেড়ে দেয় না। বলিয়া দীকু যেমন ভঙ্গি করিয়া জিভ বাহির করিয়া দেখাইল, তাহাতে রমেশ হাসিয়া ফেলিল । দীকু কিন্তু হাসিতে যোগ দিল না, কহিল, হাসির কথা নয় বাবাজী, অতি সভ্য কথা। আমি নিজেও প্রাচীন হয়েচি–কিন্তু—তুমি যে অন্ধকারে অনেক এগিয়ে এলে বাবাজী। তা হোক ভট্টাঘিমশাই, আপনি বলুন। কি আর বলব বাবা, পাড়াগা-মাত্রই এই রকম। এই গোবিন্দ গাঙ্গুলী—এ ব্যাটার পাপের কখা মুখে আনলে প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়। ক্ষ্যাস্তবামনি ত আর মিথ্যে বলেনি —কিন্তু সবাই ওকে ভয় কবে । জাল করতে, মিথ্যে সাক্ষী, মিথ্যে মোকদ্দমা সাজাতে ওর জুড়ি নেই। বেণীবাবু হাতধবী—কাজেই কেউ একটি কথা কইতে সাহস করে না, বরঞ্চ ও-ই পাঁচজনের জাত মেরে বেড়ায়। রমেশ অনেকক্ষণ পৰ্যন্ত আর কোন প্রশ্ন না করিয়া চুপ করিয়া সঙ্গে সঙ্গে চলিতে লাগিল। রাগে তাহার সর্বাঙ্গ জালা করিতেছিল। দীকু নিজেই বলিতে লাগিল— এই আমার কথা তুমি দেখে নিয়ো বাবা, ক্ষ্যাস্তিবামনি সহজে নিস্তার পাবে না। গোবিন্দ গান্ধুলী, পরাণ হালদার দু-দুটো তীমরুলের চাকে খোচা দেওয়া কি সহজ কথা। কিন্তু যাই বল বাবা, মাগীর সাহস আছে। আর সাহস থাকবে নাই বা কেন ? মুড়ী বেচে খায়, সব ঘরে যাতায়াত করে, সকলের সব কথা টের পায়। ওকে ঘাটালে কেলেঙ্কারীর সীমা-পরিসীমা থাকবে না তা বলে দিচ্চি। অনাচার আর কোন ঘরে নেই বল ? বেণীবাবুকেও— রমেশ সভয়ে বাধা দিয়া বলিল, থাকৃ, বড়দার কথায় আর কাজ নেই— দীমু অপ্রতিভ হইয়া উঠিল। কহিল, থাকৃ বাবা, আমি দুঃখী মানুষ, কারো কথায় আমার কাজ নেই। কেউ যদি বেণীবাবুর কানে তুলে দেয় ত আমার ঘরে আগুন— রমেশ আবার বাধা দিয়া কহিল, ভট্চাযিামশাই, আপনার বাড়ী কি আরো দূরে ? না বাবা, বেশী দূর নয়, এই বাধের পাশেই আমার কুঁড়ে—কোন দিন যদি— আসব বৈ কি, নিশ্চয় আসব। বলিয়া রমেশ ফিরিতে উষ্ঠত হইয়া কহিল, আবার কাল সকালেই ত দেখা হবে—কিন্তু তার পরেও মাঝে মাঝে পায়ের ধুলো দেবেন, বলিয় রমেশ ফিরিয়া গেল । দীর্ঘজীবী হও-বাপের মত হও । বলিয়া দীচু ভটচায অন্তরের ভিতর হইতে আশীৰ্ব্বচন করিয়া ছেলেপুলে লইয়া চলিয়া গেল । Σ &ίν