পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/১৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& এ-পাড়ার একমাত্র মধু পালের মুীর দোকান নদীর পথে হাটের একধারে। দশবারদিন হইয়া গেল, অথচ সে বাকী দশ টাকা লইয়া যায় নাই বলিয়া রমেশ কি মনে করিয়া নিজেই একদিন সকালবেলা দোকানের উদ্দেশে বাহির হইয়া পড়িল। মধু পাল মহা-সমাদর করিয়া ছোটবাবুকে বারান্দার উপর মোড়া পাতিয়া বসাইল এবং ছোটবাবুর আসিবার হেতু শুনিয়া গভীর আশ্চর্ঘ্যে অবাক হইয়া গেল। যে ধারে, সে উপযাচক হইয়া ঘর বহিয়া ঋণ শোধ করিতে আসে, তাহ মধু পাল এতটা বয়সে কখনো চোখে ত দেখেই নাই, কানেও শোনে নাই। কথায় কথায় অনেক কথা হইল। মধু কহিল, দোকান কেমন করে চলবে বাৰু? দু-আনা, চার আনা, এক টাকা, পাচ সিকে করে প্রায় পঞ্চাশ-যাট টাকা বাকী পড়ে আছে। এই দিয়ে যাচ্ছি বলে দু'মাসেও আদায় হবার জো নেই। এ কি, বাড়ুযোমশাই যে ! কবে এলেন ? প্রাতঃপেন্নাম হই। বাড়ুৰ্যোমশাইয়ের বা হাতে একটা গাডু, পায়ে নখে গোড়ালিতে কাদার দাগ, কানে পৈতা জড়ানো, ডান হাতে কচুপাতায় মোড়া চারিটি কুচোচিংড়ি। তিনি ফোস করিয়া একটা নিশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন, কাল রাত্তিরে এলুম, তামাক খা' দিকি মধু, বলিয়া গাডু রাখিয়া হাতের চিংড়ি মেলিয়া ধরিয়া বলিলেন, সৈরুবি জেলেনীর আকেল দেখলি মধু খপ করে হাতটা আমার ধরে ফেললে । কালে কালে কি হ’ল বল দেখিরে, এই কি এক পয়সার চিংড়ি ? বামুনকে ঠকিয়ে ক-কাল খাবি মাগী, উচ্ছন্ন যেতে হবে না ? মধু বিস্ময় প্রকাশ করিয়া কহিল, হাত ধরে ফেললে আপনার ? ক্রুদ্ধ বাড়ুযোমশাই একবার চারিদিকে দৃষ্টিপাত করিয়া উত্তেজিত হইয়া কহিলেন, আড়াইট পয়সা শুধু বাকী, তাই বলে খামক হাটমৃদ্ধ লোকের সামনে হাত ধরবে আমার ? কে না দেখলে বল মাঠ থেকে বসে এসে গাডুটি মেজে নদীতে হাত পা ধুয়ে মনে করলুম হাটটা একেবারে ঘুরে যাই! মাগী এক চুবড়ি মাছ নিয়ে বসে—আমাকে স্বচ্ছন্দে বললে কি না, কিছু নেই ঠাকুর, যা ছিল সব উঠে গেছে। আরে আমার চোখে ধুলো দিতে পারিস? ডালাটা ফল করে তুলে ফেলতেই দেখি না—অম্নি ফস করে হাতটা চেপে ধরে ফেললে। তোর আড়াইটা—আর আজকের একটা—এই সাড়ে-তিনটে পয়সা নিয়ে আমি গা ছেড়ে পালাব ? কি বলিল মধু ? মধু সায় দিয়া কহিল, তাও কি হয়! $ (to