পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/১৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পল্পী-সমাজ চোখে পড়ে নাই ! নগরের সঙ্গীব-চঞ্চল পথের ধারে যখনই কোন পাপের চিহ্ন তাহার চোখে পড়িয়া গিয়াছে, তখনই সে মনে করিয়াছে, কোনমতে তাহার জন্মভূমি সেই ছোট্ট গ্রামখানিতে গিয়া পড়িলে সে এই সকল দৃগু হইতে চিরদিনের মত রেহাই পাইয়া বাচিবে । সেখানে যাহা সকলের বড়—সেই ধৰ্ম্ম আছে এবং সামাজিক চরিত্রও আজিও সেখানে অক্ষুণ্ণ হইয়া বিরাজ করিতেছে। হা ভগবান! কোথায় সেই চরিত্র ? কোথায় সেই জীবস্ত ধৰ্ম্ম আমাদের এই সমস্ত প্রাচীন নিভৃত গ্রামগুলিতে ! ধর্মের প্রাণটাই যদি আকর্ষণ করিয়া লইয়াছ, তাহার মৃতদেহটাকে ফেলিয়া রাখিয়াছ কেন ? এই বিবর্ণ বিকৃত শবদেহটাকেই হতভাগ্য গ্রাম্য সমাজ যে যথার্থ ধৰ্ম্ম বলিয়া প্রাণপণে জড়াইয়া ধরিয়া তাহারই বিষাক্ত পুতিগন্ধময় পিচ্ছিলতায় অহৰ্নিশি অধঃপথেই নামিয়া চলিতেছে। অথচ সৰ্ব্বাপেক্ষ মৰ্ম্মান্তিক পরিহাস এই যে, জাতধৰ্ম্ম নাই বলিয়া শহরের প্রতি হহাদের অবজ্ঞা অশ্রদ্ধারও অন্ত নাই । রমেশ বাড়িতে পা দিতেই দেখিল, প্রাঙ্গণের একধারে একটি প্রোচ স্ত্রীলোক একটি এগার-বারো বছরের ছেলেকে লইয়া জড়সড় হইয়া বসিয়াছিল, উঠিয়া দাড়াইল । কিছু না জানিয়া শুধু ছেলেটির মুখ দেখিয়াই রমেশের বুকের ভিতরটা যেন কাদিয়া উঠিল। গোপাল সরকার চণ্ডীমণ্ডপের বরান্দায় বসিয়া লিখিতেছিল ; উঠিয়া আসিয়া কহিল, ছেলেটি দক্ষিণপাড়ার দ্বারিক ঠাকুরের ছেলে । আপনার কাছে কিছু ভিক্ষার জন্ত এসেচে । ভিক্ষার নাম শুনিয়া বমেশ জলিয়া উঠিয়া বলিল, আমি কি শুধু ভিক্ষা দিতেহ বাড়ি এসেছি সরকারমশাই ? গ্রামে কি আর লোক নেই ? গোপাল সরকার একটু অপ্রতিত হইয়া বলিল, সে ঠিক কথা বাৰু ! কিন্তু কওঁ। ত কখনও কারুকে ফেরাতেন না , তাই দায়ে পড়লেই এই বাড়ির দিকেই লোক ছুটে আসে । ছেলেটির পানে চাহিয়া প্রৌঢ়াটিকেই উদ্দেশ করিয়া বলিল, ই কামিনীর মা, এদের দোষও ত কম নয় বাছা! জ্যাস্ত থাকতে প্রায়শ্চিত্ত করে দিলে না, এখন মড়া যখন ওঠে না, তখন টাকার জন্য ছুটে বেড়াচ্ছে ! ঘরে ঘটিটা-বাটিটাও কি নেই বাপু ? কামিনীর মা জাতিতে সদগোপ, এই ছেলেটির প্রতিবেশী । মাথা নাড়িয়া বলিল, বিশ্বেস না হয় বাপু, গিয়ে দেখবে চল । আর কিছু থাকলেও কি মরা-বাপ ফেলে একে ভিক্ষে করতে আনি ! চোখে না দেখলেও শুনেচ ত সব ? এই ছ'মাস ধরে জামার যথাসৰ্ব্বৰ এই জন্যই ঢেলে দিয়েচি। বলি, ঘরের পাশে বামুনের ছেলেমেয়ে না খেতে পেয়ে মরবে ! রমেশ এই ব্যাপারটা কতক যেন অক্ষমান করিতে পারিল । গোপাল সরকার: » ፃፃ २छ्-२७