পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/২০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পল্পী-সমাজ এবং ঠাকুর-দেবতার প্রতি আশ্রদ্ধার কথা স্মরণ করিয়া মনটা তাহার আবার তাহার প্রতি বিমুখ হইয়া উঠিল। বেণী নিজের মনে কথা কহিতে কহিতে চলিয়া গেল। রম অনেকক্ষণ পর্য্যন্ত একভাবে দাড়াইয়া থাকিয়া নিজের ঘরে গিয়া মেঝের উপর ধপ, করিয়া বসিয়া পড়িল। সেদিন তাহাব একাদশী । খাবাব হাঙ্গামা নাই মনে করিয়া আজ যেন সে স্বস্তিবোধ কবিল । S8 বর্ষা শেষ হইয়া আগামী পূজার আনন্দ এবং ম্যালেরিযাভীতি বাঙলাব পল্লী জননীর আকাশে, বাতাসে এবং আলোকে উকিঝুকি মারিতে লাগিল, বমেশও জবে পড়িল । গত বৎসর এই রাক্ষসীর আক্রমণকে সে উপেক্ষা করিয়াছিল , কিন্তু এ বৎসর আর পারিল না। তিনি দিন জরভোগের পর আজ সকালে উঠিয়া খুব খানিকট কুইনিন গিলিয়া লইয়া জানালার বাহিরে পীতাভ বৌত্রের পানে চাহিয়া ভাবিতেছিল, গ্রামের এই সমস্ত অনাবগুক ডোবা ও জঙ্গলের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীকে সচেতন কর। সম্ভব কি না। এই তিন দিন মাত্র জয়ভোগ করিয়াই সে স্পষ্ট বুঝিয়াছিল, যা ইউক কিছু একটা করিতেই হইবে। মানুষ হইয়া সে যদি নিশ্চেষ্টভাবে থাকিয় প্রতি বৎসর, মাসের পর মাস মানুষকে রোগভোগ করিতে দেয়, ভগবান তাহাকে ক্ষমা করিবেন না। কয়েকদিন পূর্বে এই প্রসঙ্গ আলোচনা করিয়া সে এইটুকু বুঝিয়াছিল, ইহার ভীষণ অপকারিত। সম্বন্ধে গ্রামেব লোকেরা যে একেবারেই অজ্ঞ তাহা নহে , কিন্তু পরের ডোবা বুজাইয়া এবং জমির জঙ্গল কাটিয়া কেহই ঘবের খাইয়া বনেব মহিষ তাড়াইতে রাজী নহে । যাহার নিজের ডোবা ও জঙ্গল আছে, সে এই বলিয়া তর্ক করে যে, এ-সকল তাহার নিজের কৃত মহে, বাপ-পিতামহের দিন হইতেই আছে । স্বতরাং যাহাদেব গরজ তাহার। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করিয়া লইতে পারে, তাহাতে আপত্তি নাই, কিন্তু নিজে সে এজন্য পয়সা এবং উদ্যম ব্যয় করিতে অপারগ। রমেশ সন্ধান লইয়া জানিয়াছিল, এমন অনেক গ্রাম পাশাপাশি আছে যেখানে একটা গ্রাম ম্যালেরিয়ায় উজাড় হইতেছে, অথচ আর একটায় ইহাব প্রকোপ নাই বলিলেই হয়। ভাবিতেছিল, একটুকু মুস্থ হইলেই এইরূপ একটা গ্রাম সে নিজের চোখে গিয়া পরীক্ষা করিয়া আসিবে এবং তাহার পথে নিজের কর্তব্য স্থিৰ করিবে। কারণ, তাহার নিশ্চিত ধারণা জন্মিয়াছিল—এই ম্যালেরিয়াহীন গ্রামগুলিব জল-নিকাশের স্বাভাবিক সুবিধা কিছু আছেই, যাহ। এমনিই কাহারও দৃষ্টি আকর্ষণ না করিয়াও চেষ্টা করিয়া চোখে আঙ্গুল দিয়া দেখাইয়া দিলে লোক দেখিতে পাইবে। 》 २भू-२४