পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/২১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পল্লী-সমাজ করতে এসেচ! সে-সব কাও এত পুরানো হয়নি যে, তোমার মনে নেই। বরং খুলে বল, আমি গেলে তোমার নিজের কি স্ববিধে হয়, আমি চলে যেতে হয়ত রাজী হতেও পারি, বলিয়া সে যে-উত্তরের প্রত্যাশায় রমার অস্পষ্ট মুখের প্রতি চাহিয়া রহিল, তাহা পাইল না। কত বড় অভিমান যে রমার বুক জুডিয়া উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠিল, তাহাও জানা গেল না ; রমেশের নিষ্ঠর বিদ্ধপের আঘাতে মূখ যে তাহাব কিরূপ বিবর্ণ হইযা রহিল, তাহীও অন্ধকারে লক্ষ্যগোচর হইল না । কিছুক্ষণ স্থির হক্টয় রমা আপনাকে সামলাইয়া লইল । পরে কহিল, আচ্ছা খুলেই বলচি । আপনি গেলে আমার লাভ কিছুই নেই, কিন্তু না গেলে অনেক ক্ষতি । আমাকে সাক্ষী দিতে হলে । রমেশ শুষ্ক হইয়া কহিল, এই ? কিন্তু সাক্ষী না দিলে ? রম একটুখানি থামিয়া কহিল, না দিলে ছুদিন পরে আমার মহা-মায়ার পূজোয় কেউ আসবে না, আমার যতীনের উপনয়নে কেউ খাবে না—আমার বার-ব্ৰত—একপ দুর্ঘটনার সম্ভাবনা স্মরণমাত্র রমা শিহরিয়া উঠিল। রমেশের আর না শুনিলেও চলিত, কিন্তু থাকিতে পারিল না। কহিল, তার পরে ? রম ব্যাকুল হইয়া বলিল, তারও পরে ? না তুমি যাও—আমি মিনতি করচি রমেশদা, আমাকে সব দিকে নষ্ট ক’রো না ; তুমি যাও—যাও এ দেশ থেকে। কিছুক্ষণ পর্য্যন্ত উভয়েই নীরব হইয়া রহিল। ইতিপূৰ্ব্বে যেখানে যে কোন অবস্থায় হোক রমাকে দেখিলেই রমেশের বুকের রক্ত অশান্ত হইয়া উঠিত। মনে মনে শত যুকি প্রয়োগ করিয়া, নিজের অন্তরকে সহস্র কটুক্তি কবিয়াও তাঁহাকে শাস্ত করিতে পারিত না । হৃদয়ের এই নীরব বিরুদ্ধতায় সে দুঃখ পাইত, লজ্জা অঙ্গভব করিত, ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিত, কিন্তু কিছুতেই তাহাকে বশে আনিতে পারি ত না । বিশেষ করিয়া আজ এইমাত্র নিজের গৃহের মধ্যে সেই রমাকে অকস্মাৎ একাকিনী উপস্থিত হইতে দেখিয়া কল্যকাব কথা স্মরণ করিয়াই তাহার হৃদয়-চাঞ্চল্য একেবারে উদাম হইয়া উঠিয়াছিল। রমার শেষ কথায় এতদিন পরে আজ সেই হৃদয় স্থির হইল। রমার ভয়-ব্যাকুল নিৰ্ব্বন্ধতার অখণ্ড স্বার্থপরতার চেহারা এতই স্ব-স্পষ্ট হষ্টয়া উঠিল যে, তাঙ্গর অন্ধ হৃদয়েরও আজ চোখ খুলিয়া গেল । রমেশ গভীর একটা নিশ্বাস ফেলিয়া কহিল, আচ্ছা তাই হবে । কিন্তু আজ আর সময় নেই। কারণ, আমার পালাবার হেতুটা যত বড়ই তোমার কাছে হোক, আজ রাত্রিটা আমার কাছে তার চেয়েও গুরুতর । তোমার দাসীকে ডাকো, আমাকে এখনষ্ট বায়ু হতে হবে । রম আস্তে আস্তে বলিল, আজ কি কোনমতেই যাওয়া হতে পারে না ? না। তোমার দাসী গেল কোথায় ? ২১৩