পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/২২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পল্পী-সমাজ এদের ভাল করে, আমি যেখান থেকে চলে এসেছি সেইখানে চলে যাই। তখন আমি বাধা দিয়ে বলেছিলাম, না রমেশ, কাজ যদি শুরু করেছিস বাবা, তবে ছেড়ে দিয়ে পালাসনে। আমার কথা সে ত কখনও ঠেলতে পারে মা ; তাই যেদিন তার জেলের হুকুম শুনতে পেলাম, সেদিন মনে হ’ল ঠিক যেন আমিই তাকে ধয়ে-বেঁধে এই শাস্তি দিলাম। কিন্তু তার পরে বেশীকে যেদিন হাসপাতালে নিয়ে গেল, সেদিন প্রথম টের পেলাম—না না, তারও জেল খাটবাব প্রয়োজন ছিল । তা ছাড়া ত জানিনি মা, বাইবে থেকে ছুটে এসে তাল করতে যাওয়ার বিড়ম্বন এত—সে কাজ এমন কঠিন । আগে যে মিলতে হয় সকলের সঙ্গে, ভালতে মন্দতে এক ন৷ হতে পারলে যে কিছুতেই ভাগ করা যায না—সে কথা ত মনে ভাবিনি। প্রথম থেকেই সে তার শিক্ষা, সংস্কার, মস্ত জোর, মস্ত প্রাণ নিয়ে এতই উচুতে দাঁড়াল যে, শেষ পর্য্যন্ত কেউ তার নাগালহ পেলে না। কিন্তু সে ত আমার চোখে পড়ল ন৷ মা, আমি তাকে যেতেও দিলাম না, রাখতেও পারলাম না। ত্বম কি একটা বলিতে গিয়া চাপিয়া গেল। বিশ্বেশ্বরী তাহ অনুমান করিয়া কছিলেন, না রম, অনুতাপ আমি সেজন্য করিনে। কিন্তু তুইও শুনে রাগ করিসনে মা, এইবার তাকে তোরা নাবিয়ে এনে সকলের সঙ্গে যে মিলিয়ে দিলি, তাতে তোদেব অধৰ্ম্ম যত বড়ই হোক, সে কিন্তু ফিরে এসে এবার যে ঠিক সত্যটির দেখা পাবে, এ কথা আমি বড়-গলা করেই বলে যাচ্ছি। রম কথাটা বুঝিতে না পারিয়া কহিল, কিন্তু এতে তিনি কেন নেবে যাবেন জ্যাঠাইমা ? আমাদের অন্যায় অধর্মের ফলে যত বড় যাতনাই তাকে ভোগ করতে হোক, আমাদের যুদ্ধতি অামাদেরই নরকের অন্ধকূপে ঠেলে দেবে, উকে স্পর্শ করবে কেন ? বিশ্বেশ্বরী মানভালে একটুখানি হাসিয় খলিলেন, করবে বৈ কি মা। নইলে পাপ অব এত ভয়ঙ্কর কেন ? উপকারের প্রত্যুপকার কেউ যদি নাই করে, এমন কি উন্টে অপকারই করে, তাতেই বা কি এসে যায় মা, যদি না তার কৃতজ্ঞতায় দাতাকে নাবিয়ে আনে ! তুই বলচিসম, কিন্তু তোদের কুঁয়াপুর রমেশকে কি আর তেমনটি পাবে ? সে ফিরে এলে তোরা স্পষ্ট দেখতে পাবি, সে যে হাত দিয়ে দান করে বেড়াত, ভৈরব তার সেই ডান হাতটাই মুচড়ে ভেঙ্গে দিয়েচে । তারপর একটু থামিয়া নিজেই বলিলেন, কিন্তু কে জানে ! হয়ত ভালই হয়েচে । তার বলিষ্ঠ সমগ্র হাতের অপৰ্য্যাপ্ত দান গ্রহণ করবার শক্তি যখন গ্রামের লোকের ছিল না তখন এই ভাঙা হাতটাই বোধ করি এবার তাদের সত্যিকার কাজে লাগবে, বলিয়া তিনি গভীর একটা নিশ্বাস মোচন করিলেন । তাহার হাতখানি রমা নীরবে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করিয়া ধীরে ধীরে বড় ૨૨૭