পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্ত লইয়া স্ত্রী-পুত্রের হাত ধরিয়া সারারাত্রি অমনি করিয়া হিমে পড়িয়া আছে-- প্রত্যুষে সৰ্ব্বাগ্রে জাহাজের একটু ভালো স্থান অধিকার করিয়া লইবে বলিয়া। অতএব কাহার সাধ্য পরে আসিয়া ইহাদের অতিক্রম করিয়া জেটির দোরগোড়ার যায় ! অনতিকাল পরে এই দল যখন সজাগ হইয়া উঠিয়া দাড়াইল, তখন দেখিলাম কাবুলের উত্তর হইতে কুমারিকার শেষ পর্যন্ত এই কয়লাঘাটে প্রতিনিধি পাঠাইতে কাহারও ভুল হয় নাই । সব. আছে। কালো কালো গেঞ্জি গায়ে একদল চীনাও বাদ যায় নাই। আমিও নাকি ডেকের যান্ত্রি (অর্থাৎ যার নীচে আর নাই ), স্বতরাং ইহাদিগকে পরাস্ত করিয়া আমারও একটুখানি বসিবার জায়গা করিয়া লইবার কথা ! কিন্তু কথাটা মনে করিতেই আমার সৰ্ব্বাঙ্গ হিম হইয়া গেল। অথচ যখন যাইতেই হইবে, এবং জাহাজ ছাড়া আর কোন পথের সন্ধানও জানা নাই , তখন যেমন করিয়া হোক, ইহাদের দৃষ্টান্তই অবলম্বন করা কর্তব্য বলিয়া যতই নিজের মনকে সাহস দিতে লাগিলাম, ততই সে যেন হাল ছাড়িয়া দিতে লাগিল । জাহাজ যে কখন আসিয়া ঘাটে ভিড়িবে, সে জাহাজই জানে, সহসা চাহিয়া দেখি, এই চোদ-পনর শ’ লোক ইতিমধ্যে কখন ভেড়ার পালের মত সার বাধিয়া দাড়াইয়া গেছে। একজন হিন্দুস্থানীকে জিজ্ঞাসা করিলাম, বাপু, বেশ ত সকলে বসেছিলে—হঠাৎ এমন কাতার দিয়ে দাড়ালে কেন ? সে কহিল, ডগ দরি হোগা। ডগ দরি পদার্থটি কি বাপু ? লোকটা পিছনের একটা ঠেলা সামলাইয়া বিরক্তমুখে কহিল, আরে, পিলেগ কা ডগ দরি । জিনিসটা আরও দুৰ্ব্বেধ্য হইয়া পড়িল । কিন্তু বুঝি-না-বুঝি, এতগুলো লোকের যাহা আবশ্বক, আমারও ত তাহ চাই। কিন্তু কি কৌশলে যে নিজেকে ওই পালের মধ্যে গুজিয়া দিব, সে এক সমস্ত হইয়া দাড়াইল । কোথাও একটু ফাক আছে কি না খুজিতে খুজিতে দেখি, অনেক দূরে কয়েকটি খিদিরপুরের মুসলমান সঙ্কুচিত ভাবে দাড়াইয়া আছে। এটা আমি স্বদেশে-বিদেশে সৰ্ব্বত্র দেখিয়াছি—যাহা লজ্জাকর ব্যাপার, বাঙালী সেখানে লজ্জিত হইয়াই থাকে। ভারতের অপরাপর জাতির মত অসঙ্কোচে ঠেলাঠেলি মারামারি করিতে পারে না । এমন করিয়া দাড়ানোটাই যে একটা হীনতা, এই লজ্জাতেই যেন সকলের অগোচরে মাথা হেঁট করিয়া থাকে। ইহার রেঙ্গুনে দরজির কাজ করে, অনেকবার যাতায়াত করিয়াছে। প্রশ্ন করিলে বুঝাইয়া দিল যে, বর্ষায় এখনো প্লেগ যায় নাই, তাই এই সতর্কত । ডাক্তার পরীক্ষা করিয়া পাশ করিলে তবেই সে জাহাজে উঠতে পাইবে। অর্থাৎ 3 * २ग्न--७