পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/২৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՏԵ কারা-প্রাচীরের বাহিরে যে তাহার সমস্ত দুঃখ ভগবান এমন করিয়া সার্থক করিয়া দিবার আয়োজন করিয়া রাখিয়াছিলেন, বোধ করি উন্মত্ত বিকারেও ইহা রমেশের আশা করা সম্ভবপর ছিল না। ছয় মাস সশ্রম কারাবাসের পর মুক্তিলাভ করিয়া সে জেলের বাহিরে পা দিযাই দেখিল অচিন্তনীয় ব্যাপার। স্বয়ং বেণী ঘোষাল মাথায় চাদর জড়াইযা সৰ্ব্বাগ্রে দণ্ডায়মান। র্তাহার পশ্চাতে উভয়-বিদ্যালয়ের মাস্টাব পণ্ডিত ও ছাত্রের দল, কয়েকজন হিন্দু-মুসলমান প্রজা। বেণী সজোরে আলিঙ্গন করিয়া কঁাদ কাদ গলায কহিল, বমেশ, ভাই রে, নাড়ীর টান যে এমন টান, এবার তা টের পেয়েছি। যদু মুখয্যের মেয়ে যে আচায্যি হারামজাদাকে হাত করে এমন শত্রুত করবে, লজ্জা-সবমের মাথা খেয়ে নিজে এসে মিথ্যে সাক্ষী দিয়ে এত দুঃখ দেবে, সে কথা জেনেও যে আমি তখন জানতে চাইনি, ভগবান তার শান্তি আমাকে ভালমতোই দিয়েছেন। জেলের মধ্যে তুই ববং ছিলি ভাল বমেশ, বাইরে এই ছটামাস আমি যে তুষের আগুনে জলে-পুড়ে গেছি। বমেশ কি করিবে কি বলিৰে ভাৰিষা না পাইয়া হতবুদ্ধি হইয়া চাহিয়া বহিল। হেডমাস্টার পড়ুই মহাশষ একেবাবে ভূলুষ্ঠিভ হইয়া রমেশেব পায়ের ধুলা মাথায় লইলেন। তাহার পিছনেব দলটি তখন অগ্রসর হইষা কেহ আশীৰ্ব্বাদ, কেহ সেলাম, কেহ প্ৰণাম করিবাব ঘটাম সমস্ত পথটা যেন চষিযা ফেলিতে লাগিল । বেণীর কাম আর মানা মানিল না। অশ্ৰগদগদকণ্ঠে কছিল, দাদাব ওপর অভিমান বাথিস্ নে ভাই, বাড়ি চল। মা কেঁদে কেঁদে দু'চক্ষু অন্ধ কববার যোগাড় করেচেন। ঘোড়ার গাড়ি দাড়াইয়াছিল , রমেশ বিনা বাক্যব্যয়ে তাছাতে চড়িয়া বলিল । বেণী সম্মুখের জালনে স্থান গ্রন্থণ করিয়া মাথার চাদর খুলিয়া ফেলিলেন। ঘা শুকাইয়া গেলেও আঘাতের চিহ্ন জাজল্যমান । বেণী একটি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া ডান হাত উণ্টইয়া কছিলেন, কাকে আর দোষ দেব ভাই, আমার নিজের কৰ্ম্মফল—আমারই পাপের শাস্তি! কিন্তু সে আর শুনে কি হবে ? বলিয়া মুখের উপর গভীর বেদনার আভাস ফুটাইয়ুচুপ করিয়া বহিল। তাহার নিজের মুখের এই সরল স্বীকারোক্তিতে রমেশের চিত্ত আৰ্দ্ৰ হইয়া গেল । সে মনে করিল, কিছু একটা হইয়াছেই। তাই সে কথা শুনিবার জন্য আর পীড়াপীড়ি করিল না। কিন্তু বেণী যে জন্য এই ভূমিকাটি কলি, তাহা ফাসিয়া যাইতেছে দেখিয়া সে নিজেই মনে মনে ‘ছটু ফটু করিতে লাগিল । মিনিট-দুই নিঃশৰে কাটার পরে, সে আবার একটা নিশ্বাসের দ্বারা রমেশের মনোযোগ আকর্ষণ করিয়া ধীরে ধীরে কহিল, আমার এই একটা জন্মগত দোষ যে কিছুতেই