পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/২৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ দাসী কহিল, একবার দয়া করে যদি ছোটবাবু— কোথায় তিনি ? ঘরে শুধে আছেন। একটু থামিয়া কহিল, কাল ত আর সময় হয়ে উঠবে না ; তাই এখন যদি একবার— আচ্ছ চল যাই, বলিয়া রমেশ উঠিয় দাডাষ্টল। ডাকিতে পাঠাইয়া দিয়া রমা একপ্রকার সচকিত অবস্থায় বিছানায় পডিয়ছিল । দাসীর নির্দেশমত রমেশ ঘরে ঢুকিয একটি চৌকি টানিয়া লইয়া বসিতেই সে স্বদ্ধমত্র যেন মনের জোরেহ নিজেকে টানিয়া আনিযা রমেশের পদপ্রান্তে নিক্ষেপ করিল। ঘরের এককোণে মিটমিটু করিয়া একটা প্রদীপ জলিতেছিল, তাহারই মুদ্র-আলোকে রমেশ অস্পষ্ট আকবে রুমার যতটুকু দেখিতে পাইল তাহতে শারীরিক অবস্থার কিছু জানিতে পারিল না। এই মাত্র পথে আসিতে আসিতে সে যে বকম সঙ্কল্প মনে মনে ঠিক করিয়াছিল, রমার সম্মুখে বসিয়া তাহার আগাগোড়াই বেঠিক হইযা গেল। একটু খানি চুপ করিয়া থাকিয় সে কোমলস্বরে জিজ্ঞাসা করিল, এখন কেমন আছ রাণী ? রম তাহার পায়ের গোড়া হইতে একটুখানি সরিষা বসিয়া কহিল, আমাকে আপনি রমা বলেই ডাক্বেন। মেশের পিঠে কে যেন একটা চাবুকের ঘা মারিণ। সে একমুহূর্তেই কঠিন হইয়। কহিল, বেশ, তাই। শুনেছিলাম তুমি অস্বস্থ ছিলে—এখন কেমন আছ তাই জিজ্ঞেস করছিলাম। নইলে নাম যাই হোক, সে ধীরে ডাকবার আমার ইচ্ছেও নেই, আবস্তকও হবে না । রম সমস্ত বুঝিল। একটুখানি স্থির থাকিয় ধীরে ধীরে কহিল, এখন আমি ভাল আছি । তার পরে কহিল, আমি ডেকে পাঠিয়েছি বলে আপনি হয়ত খুব আশ্চৰ্য্য হয়েচেন, কিন্তু— রমেশ কথার মাঝখানে তীব্রম্বরে বলিয়া উঠিল, না হইনি। তোমার কোন কাজে আশ্চর্ঘ্য হবার দিন আমার কেটে গেছে। কিন্তু ডেকে পাঠিয়েছ কেন ? কথাটা রমার বুকে যে কত বড় শেলাঘাত কলিত রমেশ জানিতে পারিল না। সে মেন-নতমুখে কিছুক্ষণ বসিয়া থাকিয়া বলিল, রমেশদ, আজ ছুটি কাজের জন্তে তোমাকে কষ্ট দিয়ে ডেকে এনেচি। আমি তোমার কাছে কত অপরাধ যে করেচি সে ত আমি জানি। কিন্তু তবু আমি নিশ্চয়ই জানতাম, তুমি আসবে আর আমার এই শেষ অনুরোধও অস্বীকার করবে না। অগ্রভারে সহসা তাহার স্বরভঙ্গ হইয়া গেল। তাহা এতই স্পষ্ট যে রমেশ টের পাইল এবং চক্ষের নিমিষে তাহার পূর্বমেহ আলোড়িত হইয়া উঠিল। এত আঘাত ২৩২