পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/৩০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রই কিন্তু বিরাজ অভিভূতের মত সেইখানে বহুক্ষণ স্তব্ধ হইয়া বসিয়া রহিল। তাহার হৃদয়ের অন্তস্তল হইতে কে যেন বার বার ডাক দিয়া বলিতে লাগিল, “এই দেখে শেখ বিরাজ ? সেই অবধি অনেকদিন পৰ্য্যস্ত ছোটবোঁ এ-বাড়িতে আসে নাই বটে, কিন্তু একটি চোখ, একটি কান এই দিকেই পাতিয়া রাখিয়াছিল। আজ বেলা একটা বাজে, সে অতি সাবধানে এ-দিকে ও-দিকে চাহিয়া এ-বাড়িতে আসিয়া প্রবেশ করিল। বিরাজ গালে হাত দিয়া রান্নাঘরের দাওয়ার একধারে স্তব্ধ হইয়া বসিয়াছিল, তেমনই বসিয়া রহিল। ছোটবোঁ কাছে বসিয়া পায়ে হাত দিয়া নিজের মাথায় স্পর্শ করিয়া আস্তে অস্তে বলিল, দিদি কি পাগল হয়ে যাচ্চ ? বিরাজ মুখ ফিরাইয়া তীব্র কণ্ঠে উত্তর করিল, তুই ইতিস নে ? ছোটবোঁ বলিল, তোমার সঙ্গে তুলনা করে আমাকে অপরাধী ক'র না দিদি, এই দুটি পার ধুলোর যোগ্যও ত আমি নই, কিন্তু তুমি বল, কেন এমন হচ্চি ? কেন বটুঠাকুরকে আজ খেতে দিলে না ? আমি ত খেতে বায়ণ করিনি ! ছোটবোঁ বলিল, বারণ করনি সে কথা ঠিক, কিন্তু কেন একবার গেলে না ? তিনি খেতে বসে কতবার ডাক্লেন, একটা সাড়া পৰ্য্যন্ত দলে না। আচ্ছা তুমিই বল, এতে দুঃখ হয় কি না ? একটিবার কাছে গেলে ত তিনি ভাত ফেলে উঠে যেতেন না। তথাপি বিরাজ মৌন হইয়৷ রহিল। ছোটবোঁ বলিতে লাগিল, ‘তাত জোড়া ছিল বলে আমাকে ত ভুলাতে পারবে না দিদি । চিরকাল সমস্ত কাজ ফেলে রেখে তাকে স্বমুখে বসে খাইয়েচ–সংসারে এর চেয়ে বড় কাজ তোমার কোনদিন ছিল না, আজ-— কথা শেষ না হইবার পূৰ্ব্বেই বিরাজ উন্মাদের মত তাহার একটা হাত ধরিয়া সজোরে টান দিয়া বলিল, তবে দেখ বি আয় । বলিয়া টানিয়া আনিয়া রান্নাঘরের মাঝখানে দাড় করাইয়া হাত দিয়া দেখাইয়া বলিল, ঐ চেয়ে দেখ। ছোটবোঁ চাহিয়া দেখিল, একটা কাল পাথরে অপরিস্কৃত মোট চালের ভাত এবং তাঁহারই একধারে অনেকটা কলমি-শাক সিদ্ধ, আর কিছুই নাই । আজ কোন উপায় না দেখিয়া বিরাজ এইগুলি নদী হইতে ছিড়িয়া আনিয়া সিদ্ধ করিয়া দিয়াছিল । দেখিতে দেখিতে ছোটবেীর ছচোখ ৰাহিয়া ঝরঝর করিয়া অশ্রু ঝরিয়া পড়িল, কিন্তু বিরাজের চোখে জলের আভাস মাত্র নাই। দুই জায়ে নিশন্ধে মুখোমুখি চাহিয়া রহিল । ቖሕ¢