পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রই এই দুর্জয় বায়ুর শক্তি বর্ণনা করা ত ঢের দূরের কথা, সমগ্র চেতনা দিয়া অসুউব করাও যেন মাহুষের সামর্থ্যের বাহিরে জ্ঞান-বুদ্ধি সমস্ত অভিভূত করিয়া শুধুমাত্র এমনি একটা অস্পষ্ট অথচ নিঃসন্দেহ ধারণা মনের মধ্যে জাগিয়া রহিল যে, দুনিয়ার মিয়াদ একেবারে নিঃশেষ হইতে আর বিলম্ব কত পাশেই যে লোহার খুটি ছিল, গলার চাদর দিয়া নিজেকে তাহার সঙ্গে বধিয়া ফেলিয়া দিলাম, অমৃক্ষণ মনে হইতে লাগিল এইবার ছিড়িয়া ফেলিয়া আমাকে সাগরের মাঝখানে উড়াইয়া লইয়া ফেলবে । হঠাৎ মনে হইল, জাহাজের গায়ে কালো জল যেন ভিতরের ধাক্কায় বজ বজ, করিয়া ক্রমাগত উপরের দিকে ঠেলিয়া উঠিতেছে। দূরে চোখ পড়িয় গেল—দৃষ্টি আর ফিরাইতে পারিলাম না। একবার মনে হইল এ বুঝি পাহাড়, কিন্তু পরক্ষণেই সে ভ্রম যখন ভাঙ্গিল তখন হাত জোড় করিয়া বলিলাম, ভগবান ! এই চোখ দুটি যেমন তুমিই দিয়াছিলে, আজ তু মই তাহদের সার্থক করিলে। এতদিন ধরিয়াত সংসারে সর্বত্র চোখ মেলিয়া বেড়াইতেছি ; কিন্তু তোমার এই স্বষ্টির তুলনা ত কখনও দেখিতে পাই নাই। যতদূর দৃষ্টি যায়, এই যে অচিন্তনীয় বিরাটকায় মহাতরঙ্গ মাথায় রজতগুভ্র কিরীট পরিয়া দ্রুতবেগে অগ্রসর হইয়া আসিতেছে, এত বড় বিস্ময় জগতে আর আছে কি ! সমুদ্রে ত কত লোকই যায় আসে ; আমি নিজেও ত আরও কতবার এই পথে যাতায়াত করিয়াছি ; কিন্তু এমনটি ত আর কখনও দেখিতে পাইলাম না। তা ছাড়া চোখে না দেখিলে, জলের ঢেউ যে কোন গতিকেই এত বড় হইয়া উঠিতে পারে, এ কথা কল্পনার বাপের সাধ্যও নাই কাহাকেও জানায় । মনে মনে বলিলাম, হে ঢেউ-সম্রাট ! তোমার সংঘর্ষে আমাদের যাহা হইবে সে তো আমি জানিই ; কিন্তু এখনও ত তোমার আসিয়া পৌছতে অন্ততঃ আধ-মিনিট কাল বিলম্ব আছে, সেই সময়টুকু বেশ করিয়া তোমার কলেবরখানি যেন দেখিয়া লইতে পারি। - একটি জিনিসের সুবিপুল উচ্চতা ও ততোধিক বিস্তৃতি দেখিয়াই কিছু এ ভাব মনে আসে না ; কারণ তা হইলে হিমালয়ের যে-কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই ত যথেষ্ট। কিন্তু এই যে বিরাট ব্যাপার জীবস্তের মত ছুটিয়া আসিতেছে সেই অপরিমেয় গতিশক্তির অনুভূতিই আমাকে অভিভূত করিয়া ফেলিয়াছিল। কিন্তু সমুদ্রজলে ধাক্কা দিলে যাহা জলিয়া উঠিতে থাকে, সেই জলা নানা প্রকারের বিচিত্র রেখায় ইহার মাথার উপর খেলা করিতে না থাকিলে, এই গভীরকৃষ্ণ জলরাশির বিপুলত্ব এই অন্ধকারে হয়ত তেমন করিয়া দেখিতেই পাইতাম না। এখন যতদূর দৃষ্ট যায়, ততদূরই এই আলোকমালা, যেন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রদীপ জালিয়া এই ভয়ঙ্কর স্বন্দরের মুখ আমার চক্ষের সম্মুখে উদঘাটিত করিয়া দিল । ఫిబ్రీ