পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/৩৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নব-বিধান ধাবার সংকল্প তাহার বিচলিত হইবে না। অথচ, সাধারণ মানব-চরিত্রের যতটুকু অভিজ্ঞতা এ-বয়সে তাহার সঞ্চিত হইয়াছে তাহার সহিত প্রকাও গরমিল যেন এক চক্ষে হাসি ও অপর চক্ষে অশ্রুপাত করিয়া তাহার মনটাকে লইয়া অবিশ্রাম নাগরদোলায় পাক খাওয়াইয়া মরিতেছে। ক্ষেত্রমোহন আসিয়া একেবারে সোজা রান্নাঘরের দরজায় গিয়া দেখা দিলেন, কহিলেন, প্রসাদ পাবার আর বিলম্ব কত বৌঠাকরুন ? উষা মাথার কাপড়টা একটুখানি টানিয়া দিয়া হাসিমূথে কহিল, সে কথা আপনার বড় কুটুম্বটিকে জিজ্ঞাসা করে আমুন, নইলে আমার সব হয়ে গেছে। ক্ষেত্রমোহন বলিলেন, ঠক্‌বার পাত্রী আপনি নন, কিন্তু ঠকে গেলাম আমি নিজে । রায়ার বহর দেখে এই ভরা-পেটেও লোভ হয় বৌঠাকরুন, কিন্তু অমুখের ভয় করে। তবে নেমভন্ন ক্যাসেল করলে চলবে না, আর একদিন এসে খেয়ে যাবো। উষা চুপ করিয়া রহিল। ক্ষেত্রমোহন বলিলেন, আপনার ছেলেটি কই ? উষা কহিল, আজ কি ষে মাথায় খেয়াল এল কিছুতেই ইস্কুলে যাবে না। কোনমতে দুটি খাইয়ে এইমাত্র পাঠিয়ে দিলাম। ক্ষেত্রমোহন বলিলেন, আপনাকে সে বড় ভালবাসে ! একটুখানি হাসিয়া কহিলেন, ভালকথা, আপনার সেই বাপের বাড়ি যাবার প্রস্তাবটা কি হ’ল ? বাস্তবিক বৌঠাকরুন, রাগের মাথায় আপনার মুখ দিয়েও যদি বেফাঁস কথা বার হয় ত ভরসা করবার সংসারে আর কিছু থাকে না। উষা এ অভিযোগের উত্তর দিল না, নতমুখে নীরব হইয়া রহিল। তথা হইতে বাহির হইয়া ক্ষেত্রমোহন শৈলেশের পড়ার ঘরে আলিয়া উপস্থিত হইলেন। শৈলেশ স্বানান্তে আয়নার সুমুখে দাড়াইয়া মাথা আঁচড়াইতেছিল, মূখ ফিরিয়া চাহিল। ক্ষেত্রমোহন জিজ্ঞাসা করিলেন, কলেজ আজি বন্ধ না কি হে ? 奢 না। তবে প্রথম দুঘণ্টা ক্লাস নেই। ক্ষেত্রমোহন নিশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন, আচ্ছা বেশ। কিন্তু বৌঠাকরুনের বাপের বাড়ি যাবার আয়োজন কিরূপ করলে ? শৈলেশ কহিল, আয়োজন ষা করবার তিনি গেলে তবে করব । গুনচি কাল তার দাদা এসে নিয়ে যাবেন। ক্ষেত্রমোহন বলিলেন, তুমি একটি ইডিয়ই। ও স্ত্রী নিয়ে তুমি পেরে উঠবে না ভাই, তার চেয়ে বরঞ্চ বদলাবালী করে নাও, তুমিও মুখে থাকে, আমিও মুখে থাকি । শৈলেশ অত্যন্ত বিরক্ত হইয়া কহিল, বয়েস ত ঢ়ের হ’ল ক্ষেত্র, এইবার এই অভয় রসিকতাগুলো ত্যাগ কর না ! ❖ጎኔ