পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ একেবারে উঠিয়া দাড়াইয়া কহিল, যাই, আপনাদের চা তৈরী করে আনি-দুটো বাজল । n মনে মনে বলিতাম, তোমার স্বামী যত পাপিষ্ঠই হোন, পুরুষমানুষ ত ! যদি কখনো তাকে পাও, তোমার মূল্য তিনি বুঝবেনই। তার পরে একদিন মিয়াদ ফুরাইল । দাদাও ভাল হইলেন, আমরাও সরকারী ছাড়পত্র পাইয়া আর একবার পোটলা-পুটলি বাধিয়া রেজুন যাত্রা করিলাম। কথা ছিল, শহরে মোসাফিরখানায় দুই-একদিনের জন্য আশ্রয় লইয়া একটা বাসা তাহদের ঠিক করিয়া দিয়া তবে আমি নিজের জায়গায় যাইব, এবং যেখানেই থাকি র্তাহার স্বামীর ঠিকানা জানিয়া তাহাকে একটা সংবাদ পাঠাইবার প্রাণপণ চেষ্ট করিব । শহরে যেদিন পদার্পণ করিলাম, সে দিনটি ব্রহ্মবাসীদের কি একটা পৰ্ব্বদিন । আর পর্বও তাহাদের লাগিয়াই আছে। দলে দলে ব্ৰহ্ম নর-নারী রেশমের পোশাক পরিয়া তাহদের মন্দিরে চলিয়াছে ৷ স্ত্রী-স্বাধীনতার দেশ, সুতরাং আনন্দ-উৎসবে তাহাদের সংখ্যাই অধিক। বৃন্ধ, যুবতী, বালিকা—সকল বয়সের স্ত্রীলোকই অপূৰ্ব্ব পোশাক-পরিচ্ছদে সজ্জিত হইয়া, হাসিয়া, গল্প করিয়া, গান গাইয়া সমস্ত পথটা মুখরিত করিয়া চলিয়াছে। ইহাদের রং অধিকাংশই খুব ফরসা ; মেঘের মত চুলের বোঝা ত শতকরা নব্বই জন রমণীর হাটুর নীচে পড়ে। খোপায় ফুল, কানে ফুল, গলায় ফুলের মালা—ঘোমটার বালাই নাই, পুরুষ দেখিয় ছুটিয়া পলাইবার আগ্রহাতিশয্যে হোচট খাইয়া উপুড় হইয়া পড়া নাই—দ্বিধা-সঙ্কোচলেশহীন—যেন ঝরনার মুক্ত প্রবাহের মতই স্বচ্ছন্দে, অবাধে বহিয়া চলিয়াছে। প্রথম দৃষ্টিতে একেবারে মুগ্ধ হইয়া গেলাম। নিজেদের দেশের তুলনায় মনে মনে তাহাদের অশেষ প্রশংসা করিয়া বলিলাম, এই ত চাই ! এই নইলে আবার জীবন ! তাহাদের সৌভাগ্যটা সহসা যেন ঈর্ষার মত বুকে বাজিল। কহিলাম, এই যে ইহারা চতুর্দিকে আনন্দ হষ্টি করিয়া চলিয়াছে, সে কি অবহেলার জিনিস ? রমণীদের এতখানি স্বাধীনতা দিয়া এ দেশের পুরুষেরা কি এমন ঠকিয়াছে, আর আমরাই বা তাহদের আষ্ট্রেপৃষ্টে বাধিয়া রাখিয়া জীবনটা পঙ্গু করিয়া দিয়া কি এমন জিতিয়াছি! আমাদের মেয়েরাও যদি এমনি একদিন—হঠাৎ একটা গোলমাল শুনিয়া পিছনে ফিরিয়া যাহা দেখিলাম, তাহা আজও আমার তেমনি স্পষ্ট মনে আছে । বচসা বাধিয়াছে ঘোড়ার গাড়ির ভাড়া লইয়া । গড়োয়ান আমাদের হিন্দুস্থানী মুসলমান। সে কহিতেছে, চুক্তি হইয়াছিল আট আনা, আর তিনজন ভাঘরের ব্রহ্মরমণী গাড় হইতে নামিয়া পড়িয়া সমস্বরে চীৎকার করিয়া বলিতেছেন-না, পাচ আন ; মিনিট দুই-তিন তর্কাতর্কির পরেই, বলং বলং § e