পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ এরা কেউ আপত্তি কয়ে না? ঝি আবার একটু হাসিয়া বলিল, এই বিদেশে সাতসমূদ্ধ কু-পারে এসে কি অত বাম্নাই করা চলে বাৰু? তারা বলে, দেশে ফিরে গঙ্গাস্তান ক’রে একটা অঙ্গ-প্রাচিত্তির করলেই হবে। হয়ত হয় ; কিন্তু আমি জানি, যে দুই-চারিজন মাঝে মাঝে দেশে আসে, তাহারা চলতি-মুখে কলিকাতার গঙ্গায় একবার গঙ্গাস্তানটা হয়ত করিয়া লয়, কিন্তু অঙ্গ-প্রচিত্তির কোনকালেই করে না। বিদেশের আবহাওয়ার গুণে ইহা তাহার বিশ্বাসই করে না। দেখিলাম, হোটেলে মাত্র দুটি হুকা আছে ; একটি ব্রাহ্মণের, অপরটি যাহারা ব্ৰাহ্মণ নয় তাহাদের । আহারাদির পর কৈবর্তের হাত হইতে ডোম এবং ডোমের হাত হইতে কৰ্ম্মকারমশাই স্বচ্ছন্দে হাত বাড়াইয়া ইকা লইয়া তামাক ইচ্ছা করিলেন। দ্বিধার লেশমাত্র নাই। দিন-দুই পরে এই কৰ্ম্মকারটির সহিত আলাপ করিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, আচ্ছা, এতে তোমাদের জাত যায় না ? কৰ্ম্মকার কহিল, যায় না আর মশাই, যায় বৈ কি ? তবে ? ও কি আর প্রথমে ডোম বলে নিজের পরিচয় দিয়েছিল, বলেছিল, কৈবৰ্ত্ত। তার পর সব জানাজানি হয়ে গেল । তখন তোমরা কিছু বললে না ? কি আর বলব মশাই,কাজটা ত খুবই অন্যায় করেচে, সে বলতেই হবে। তবে লজ্জা পাবে, এই জন্য সবাই জেনেও চেপে গেল । কিন্তু দেশে হ’লে কি হ’ত ? লোকটা যেন শিহরিয়া উঠিল। কহিল, তা হলে কি আর কারও রক্ষে ছিল? তারপর একটুখানি চুপ করিয়া থাকিয়া নিজেই বলিতে লাগিল, তবে কি জানেন বাবু, বামুনের কথা ধরিনে ; তারা হলেন বর্ণের গুরু, তাদের কথা আলাদা। নইলে আর সবাই সমান ; নবশাখই বলুন আর হাড়ি-ডোমই বলুন কিছুই কারো গায়ে লেখা থাকে না , সবাই ভগবানের স্বষ্টি, সবাই এক, সবাই পেটের জালায় বিদেশে এসে লোহা পিটচে ; আর যদি ধরেন বাবু, হরি মোড়ল ডোম হলে কি হয়, মদ খায় না, গাজা খায় না—আচার-বাৰহারে কার সাধ্যি বলে ও ভাল জাত নয়, ডোমের ছেলে ; আর ঐ লক্ষ্মণ, ও ত ভাল কায়েতের ছেলে, ওর দেখুন দিকি একবার ব্যবহারটা ? ব্যাটা দুবার জেলে যেতে যেতে বেঁচে গেছে। সবাই না থাকলে এত দিন ওকে জেলে মেথরের ভাত খেতে হ’ত যে !