পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্ত দিয়া শুধু চোখ মূছিল, কিছুই বলিল না। আমার ক্রোধেরও সে কোন জবাব দিল না। অনেকক্ষণ পরে আবার আমিই জিজ্ঞাসা করিলাম, তুমি তাকে মাপ করতে পারবে ? অভয়া শুধু ঘাড় না ডুয়া তাহার সম্মতি জানাইল । তোমাকে নিয়ে যেতে চাইলে যাবে ? সে তেমনি মাথা নাড়িয়া জবাব দিল । বৰ্ম্ম-মেয়েদের স্বভাব যে কি, সে ত তুমি প্রথম দিনেই টের পেয়েচ ; তবু সেখানে যাবার সাহস হবে ? এবার অভয়াকে মুখ তুলিতে দেখিলাম, তাহার দুই চক্ষু দিয়া আশ্রয় ধারা বহিতেছে । সে কথা কহিতে চেষ্টা করিল, কিন্তু পারিল না । তার পরে রায় বার আঁচলে চোখ মুছিয়া রুদ্ধস্বরে বলিল, না গেলে আর আমার উপায় কি বলুন ? ' কথাটা শুনিয়া খুশী হইব কি চোখের জল ফেলিব, ভাবিয়া পাইলাম না ; কিন্তু উত্তর দিতে পারিলাম না। সেদিন আর কোন কথা হইল না। বাসায় ফিরিবার সমস্ত পথটা এই একটা কথাই পুনঃ পুনঃ আপনাকে আপনি জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলাম, কিন্তু কোনদিকে চাহিয়া কোন উত্তর খুজিয়া পাইলাম না। শুধু বুকের ভিতরটা—তা সে কাহার উপর জানি না- একদিকে যেমন নিষ্ফল ক্রোধে জলিয়া উঠিতে লাগিল, অন্যদিকে তেমনই এক নিরাশ্রয় রমণীর ততোধিক নিরুপায় প্রশ্নে ব্যথিত, ভারাক্রান্ত হইয়া রহিল ; পরদিন অভয়ার ঠিকানার জন্য যখন লোকটা সম্মুখে আসিয়া দাড়াইল, তখন ঘূণায় তাহার প্রতি আমি চাহিতে পর্য্যন্ত পারিলাম না। আমার মনের ভাব বুঝিয়া, আজ সে বেশী কথা না কহিয়া, শুধু ঠিকানা লিখিয়া লইয়াই বিনীতভাবে প্রস্থান করিল। কিন্তু তাহার পরের দিন আবার যখন সাক্ষাৎ করিতে আসিল, তখন তাহার চোখ-মুখের ভাব সম্পূর্ণ বদলাইয়া গেছে। নমস্কার করিয়া অভয়ার একছত্র লেখা আমার টেবিলের উপর ধরিয়া দিয়া বলিল, আপনি যে আমার কি উপকার করলেন, তা মুখে বলে কি হবে—যতদিন বাচব, আপনার গোলাম হ’য়ে থাকব। অভয়ার লেখাটার প্রতি দৃষ্ট রাখিয়া বলিলাম, আপনি কাজ করুন গে, বড়সাহেব এবার মাপ করেচেন । সে হাসিমুখে কহিল, বড় সাহেবের ভাবন। আমি আর ভাবিনে, শুধু আপনি ক্ষমা করলেই আমি বর্তে যাব—আপনার শ্রীচরণে আমি বহু অপরাধ করেচি ; এই বলিয়া আবার সে বলিতে শুরু করিয়া দিল—তেমনি নির্জলা মিথ্যা এবং চাটুবাক্য, এবং মাঝে মাঝে রুমাল দিয়া চোখ মুছিতেও লাগিল। অত কথা শুনিবার ধৈর্য্য কাহারও থাকে ন—সে শাস্তি আপনাদের দিব না—আমি শুধু তাহার মোট বক্তব্যটা সংক্ষেপে বলিয়া দিতেছি। তাহা এই যে, সে স্ত্রীর নামে যে অপবাদ , & 3.