পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ ইতিহাস শুনিয়া যখন বাটীর বাহির হইলাম, তখন বেলা আর বেশী নাই। ঘরে ফিরিতে প্রবৃত্তি হইল না। দিনের শেষে কৰ্ম্ম-অন্তে সবাই বাসায় ফিরিয়াছে—দাঠাকুরের হোটেল তখন নানাবিধ কলহান্তে মুখরিত। এই সমস্ত গোলমাল যেন বিষের মত মনে হইতে লাগিল । একাকী পথে পথে ঘুরিয়া কেবলই মনে হইতে লাগিল, এ সমস্তার মীমাংসা হইত কি করিয়া ? বৰ্ম্মাদের মধ্যে বিবাহের বিশেষ কিছু একটা বাধাধরা নিয়ম নাই। বিবাহের ভদ্র অনুষ্ঠানও আছে, আবার স্বামী-স্ত্রীর মত যে কোন নর-নারী তিন দিন একত্রে বাস করিয়া তিন দিন এক পাত্র হইতে ভোজন করিলেও সে বিবাহ । সমাজ তাহাদের অস্বীকার করে না । সে হিসাবে মেয়েটিকে কোন মতেই ছোট করিয়া দেখা যায় না। আবার বাবুটির দিক দিয়া হিন্দু আইন-কামুনে এটা কিছুই নয়। এই স্ত্রী লইয়া সে দেশে গিয়া বাস করিতে পারে না। হিন্দুসমাজ তাহাদের গ্রহণ না হয় নাই করিল, কিন্তু আপামর-সাধারণ যে ঘৃণার চক্ষে দেখিবে, সেও সারা জীবন সহ করা কঠিন। হয় চিরকাল প্রবাসে নিৰ্ব্বাসিতের স্থায় বাস করা, না হয়, এই দাদাটি ছোট ভাইয়ের যে ব্যবস্থা করিল, তাহাই ঠিক। অথচ ধৰ্ম্ম কথাটার যদি কোন অর্থ থাকে ত—সে হিন্দুরই হোক, বা আর কোন জাতিরই হোক—এত বড় একটা নৃশংস ব্যাপার যে কি করিয়া ঠিক হইতে পারে সে ত আমার বুদ্ধির অতীত। এই সকল কথা না হয় সময় মত চিন্তা করিয়া দেখিব ; কিন্তু এই যে কাপুরুষটা আজ বিনাদোষে এই অনন্তনির্ভর নারীর পরম মেহের উপর বেদনার বোঝা চাপাইয়া তাহাকে মুখ ভাঙচাইয়া পলায়ন করিল, এই আক্রোশটাই আমাকে যেন দুগ্ধ করিতে লাগিল । পথের একধার দিয়া চলিয়াছি ত চলিয়াছি। বহুদিন পূৰ্ব্বে একদিন অভয়ার পত্র পড়িবার জন্য যে চায়ের দোকানে প্রবেশ করিয়াছিলাম, সেই দোকানদারটি বোধ করি, আমাকে চিনিতে পারিয়া ডাক দিয়া কহিল, বাবুসাব, আইয়ে! হঠাৎ যেন ঘুম ভাঙ্গিয়া দেখিলাম, এ সেই দোকান এবং ওই রোহিণীর বাসা। বিনা বাক্যে তাহার আহবানের মর্য্যাদা রাখিয়া ভিতরে ঢুকিয় এক পেয়াল চা পান করিয়া বাহির হইলাম। রোহিণীর দরজায় ঘা দিয়া দেখিলাম ভিতর হইতে বন্ধ। কড়া ধরিয়া বার-দুই নাড়া দিতেই কবাট খুলিয়া গেল। চাহিয়া দেখি সম্মুখে অভয়া । তুমি যে ? অভয়ার চোখ-মুখ রাঙা হইয়া উঠিল ; এবং কোন জবাব না দিয়াই সে চক্ষের নিমেষে ছুটিয়া গিয়া তাহার ঘরে ঢুকিয়া খিল বন্ধ করিয়া দিল। কিন্তু লজ্জার যে মূর্তি সন্ধ্যার সেই অস্পষ্ট আলোকেও তাহার মুখের উপর ফুটয় উঠতে ዓኒ