পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্ত দিন, আমার সান্থনা এই যে, জগতে আজও একটা বড় জাত আছে, যারা প্রকাশ্বে এবং স্বচ্ছন্দে স্থান দিতে পারে । তাহার কথাটায় একটু আহত হইয়া কহিলাম, সকল ক্ষেত্রে আশ্রয় দেওয়াই কি তাল কাজ ব’লে মেনে নিতে হবে ? অভয়া বলিল, তার প্রমাণ ত হাতে হাতে রয়েছে শ্ৰীকাস্তবাবু। পৃথিবীতে কোন অন্যায়ই বেশী দিন শ্ৰীবৃদ্ধি লাভ করে না। এই যদি সত্য হয়, তাহলে কি তারা অন্যায়টাকেই প্রশ্রয় দিয়ে দিন দিন বড় হয়ে উঠছে, আর আপনার ন্যায়-ধৰ্ম্ম আশ্রয় করেই প্রতিদিন ক্ষুদ্র এবং তুচ্ছ হয়ে যাচ্ছেন বলতে হবে ? আমরা ত এখানে অল্প দিন এসেচি, কিন্তু এর মধ্যেই আমি দেখেচি, মুসলমানেতে এ দেশটা ছেয়ে যাচ্চে ! শুনেচি এমন গ্রাম নাকি নেই, যেখানে এক ঘর মুসলমানও বাস করেনি, যেখানে একটা মসজিদও তৈরী হয়নি। আমরা হয়ত চোখে দেখে যেতে পাব না, কিন্তু এমন দিন শীঘ্র আসবে যেদিন আমাদের দেশের মত এই বৰ্ম্ম দেশটাও একটা মুসলমান-প্রধান স্থান হয়ে উঠবে। আজ সকালেই জাহাজ-ঘাটে যে অন্যায় দেখে আপনার মন খারাপ হয়ে আছে, আপনিই বলুন ত, কোন মুসলমান বড় ভাইয়েরই কি ধৰ্ম্ম এবং সমাজের ভয়ে এই ষড়যন্ত্র, এই হীনতার আশ্রয় নিয়ে এমন একটা আনন্দের সংসার ছারখার ক’রে দিয়ে পালাবার প্রয়োজন হ’তো ? বরঞ্চ সে সবাইকে দলে টেনে নিয়ে আশীৰ্ব্বাদ ক’রে অগ্রজের সম্মান ও মর্য্যাদা নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতো। কোনটাতে সত্যকার ধৰ্ম্ম বজায় থাকতো শ্ৰীকান্তবাবু ? গভীর শ্রদ্ধাভরে জিজ্ঞাসা করিলাম, আচ্ছা, আপনি ত পাড়াগায়ের মেয়ে, আপনি এত কথা জানলেন কি করে ? আমার ত মনে হয় না, এত বড় প্রশস্ত হৃদয় আমাদের পুরুষমানুষের মধ্যেও বেশী আছে। আপনি যার মা হবেন, তাকে দুর্ভাগ ব’লে ভাবতে ত অন্ততঃ আমি কোন মতেই পারবো না । অভয়া মানমুখে একটুখানি হাসির আভাস ফুটাইয়া বলিল, তা হলে ঐকাস্তবাবু, আমাকে সমাজ থেকে বার করে দিলেই কি হিন্দুসমাজ বেশী পবিত্র হয়ে উঠবে ? তাতে কি কোন দিক দিয়েই সমাজে ক্ষতি পোঁছুবে না ? একটু স্থির থাকিয়া পুনরায় একটু হাসিয়া কহিল, আমি কিন্তু কিছুতেই বেরিয়ে যাব না। সমস্ত অপযশ, সমস্ত কলঙ্ক, সমস্ত দুর্ভাগ্য মাথায় নিয়ে আমি চিরদিন আপনাদের হয়েই থাকব। আমার একটি সন্তানকেও যদি কোন দিন মামুষের মত মানুষ করে তুলতে পারি, সেদিন আমার সকল দুঃখ সার্থক হবে, এই আশা নিয়ে আমি বেঁচে থাকব ! সত্যিকার মানুষই মাহুষের মধ্যে বড়, না তার জন্মের হিসাবটাই জগতের বড়, এ আমাকে যাচাই ক’রে দেখতে হবে। ፃእ