পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/১০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষ প্রশ্ন অবিনাশ কহিলেন, আর অপ্রকাশ্বে কি-সব প্রাণায়াম, রেচক-কুম্ভকের চর্চ করা হয়, সেটাও খুলে বল ? শুনিয়া সবাই হাসিল। নীলিমা আমুনয়ের স্বরে কমলকে কহিল, মুখুয্যেমশায়ের আজকের মেজাজ দেখে যেন ওঁর বিচার করে নেবেন না। মাঝে মাঝে মাথা ওঁর অনেক ঠাও থাকে। নইলে বহু পূর্বেই আমাকে পালিয়ে বাঁচতে হতো। এই বলিয়া সে হাসিতে লাগিল । কোথায় একটুখানি যেন উত্তাপের বাষ্প জমিয়া উঠিতেছিল, এই স্নিগ্ধ পরিহাসটুকুর পরে যেন তাহা মিলাইয়া গেল। বামুনঠাকুর আসিয়া জানাইল, কমলের খাবার তৈরি হইয়া গেছে। অতএব এখনকার মত আলোচনা স্থগিত রাথিয়া সকলকে উঠিতে হইল। ঘণ্টা-দুই পরে আহারাদি সমাধা হইলে পুনরায় সকলে আসিয়া যখন বাহিরের ঘরে বসিলেন—কমল তখন পূৰ্ব্ব-প্রসঙ্গের স্বত্র ধরিয়া প্রশ্ন করিল, ছেলের রেচক-কুম্ভক না করুক, কলেজের পড়া মুখস্থ করা ছাড়াও ত কিছু করে—সে কি ? : হরেন্দ্র বলিল, করে । ভবিষ্ণুতে যাতে সত্যিই মানুষ হতে পারে সে চেষ্টাতেও তাদের অবহেলা নেই। কিন্তু পায়ের ধূলো যেদিন পড়বে সেদিন সমস্ত বুঝিয়ে বলব, আজ নয় । এই মেয়েটির প্রতি সম্মানের আতিশয্যে অধিনাশের গা জলিতে লাগিল, কিন্তু তিনি চুপ করিয়া রছিলেন। নীলিমা কহিল, আজ বলতেই বা বাধা কি ঠাকুরপো ? তোমার শেখানোর পদ্ধতি না হয় না-ই ভাঙলে, কিন্তু পুরাকালের ভারতীয় আদর্শে নিজের মত করে যে তাদের ব্রহ্মচৰ্য্য শিক্ষা দিচ্ছ এ-কথা জানাতে দোষ কি ? তোমার কাছে ত আমি আভাসে একদিন এই কথাই শুনেছিলুম। হরেন্দ্র সবিনয়ে বলিল, মিথ্যে শুনেচেন তাও ত বলচিনে বৌদি, বলিয়াই তাহার সেদিনের তর্কের ব্যাপারটা স্মরণ হইল। কমলের প্রতি চাহিয়া বলিল, আপনারও বোধ করি আমার কাজে সহানুভূতি নেই ? কমল কহিল, কাজটা আপনার ঠিক কি না জানলে ত বলা যায় না হরেনবাৰু। কিন্তু পুরাকালের ছাচে তৈরি করে তোলাটাই যে সত্যিকার মানুষের ছাচে তৈরি করে তোলা এও ত যুক্তি নয়। হরেন্দ্র বলিল, কিন্তু সেই যে আমাদের ভারতের আদর্শ ? কমল জবাব দিল, ভারতের আদর্শ যে চিরযুগের চরম আদর্শ—এই বা কে স্থির করে দিলে বলুন ? ■ - ፭»ዓ