পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/১০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎসাহিত্য-সংগ্ৰহ অবিনাশ এতক্ষণ কথা কহেন নাই, রাগ চাপিয়া বলিলেন, চরম আদর্শ না হতে পারে কমল, কিন্তু এ আমাদের পূর্বপিতামহগণের আদর্শ। ভারতবাসীর এই নিত্যকালের লক্ষ্য—এই তাদের একটামাত্র চলবার পথ । হরেনের আশ্রমের ব্যাপার আমি জানিনে, কিন্তু সে এই লক্ষ্যই যদি গ্রহণ করে থাকে আমি তাকে আশীৰ্ব্বাদ করি। কমল কিছুক্ষণ মিঃশবে তাহার মুখের প্রতি চাহিয়া থাকিয় কহিল, জানিমে কেন মানুষের এ ভুল হয় ! নিজেদের ছাড়া তারা যেন আর কোন ভারতবাসীকে চোখে দেখতেই পায় না। আরও ত ঢের জাত আছে—তারা এ আদর্শ নেবে কেন ? অবিনাশ কুপিত হইয়া কহিলেন, চুলোয় যাক তারা। আমাদের কাছে এ আবেদন নিফল । আমি শুধু নিজেদের আদৰ্শই স্পষ্ট করে দেখতে পেলে যথেষ্ট মনে করব । কমল ধীরে ধীরে বলিল, এ আপনার অত্যন্ত রাগের কথা অবিনাশবাৰু। নইলে এতবড় অন্ধ ভাবতে আপনাকে আমার প্রবৃত্তি হয় না। একটু থামিয়া বলিল, কিন্তু কি জানি, পুরুষেরা সবাই বুঝি শুধু এমনি করেই ভাবে । সেদিন অজিতবাবুর সুমুখেও হঠাৎ এই প্রসঙ্গই উঠে পড়েছিল। ভারতের সনাতন বৈশিষ্ট্য, তার স্বাতন্ত্র্য নষ্ট হবার উল্লেখে র্তার সমস্ত মুখ ব্যথায় ফ্যাকাশে হয়ে গেল। একদিন তিনি ছিলেন উৎকট স্বদেশী—আজও মনে হয় ত তাই আছেন—-এ সম্ভাবনা তার কাছে কেবল প্রলয়ের নামান্তর । বলিয়া সে একটা দীর্ঘনিশ্বাস মোচন করিল। অবিনাশ কি একটা বোধ হয় জবাব দিতে উষ্ঠত ছিলেন, কিন্তু কমল সেদিকে দৃকৃপাত না করিয়াই বলিতে লাগিল, কিন্তু আমি ভাবি এতে ভয় কিসের ? বিশেষ কোন একটা দেশে জন্মেচি বলে তারই নিজস্ব আচার-আচরণ চিরদিন অঁাকড়ে থাকতে হবে কেন ? গেলই বা তার বিশেষত্ব নিঃশেষ হয়ে । এতই কি মমতা ? বিশ্বের সকল মানব একই চিন্তা, একই ভাব, একই বিধি-নিষেধের ধ্বজ বয়ে দাড়ায়–কি তাতে ক্ষতি ? ভারতীয় বলে চেনা যাবে না এই ত ভয় ? নাই বা গেল চেনা। বিশ্বের মানবজাতির একজন বলে পরিচয় দিতে ত কেউ বাধা দেবে না। তার গৌরবই বা कि राय ? অবিনাশ সহসা জবাব খুজিয়া না পাইয়া বলিলেন, কমল, তুমি যা বলচ, নিজে তার অর্থ বোঝ না। এতে মানুষের সর্বনাশ হবে। কমল উত্তর দিল, মানুষের হবে না 'অবিনাশবাবু, ধারা অন্ধ তাদের অহঙ্কারের পৰ্ব্বনাশ হবে। অবিনাশ কহিল, এ-সব নিছক শিবনাথের কথা । ఫిy