পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/১২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ দেশের একমাত্র কল্যাণ স্থির করে আশ্রম-প্রতিষ্ঠায় নিযুক্ত হয়েচেন বলুন ত ? এই কি আপনার স্বদেশ-সেবার আদর্শ ? হরেন্দ্র ব্যস্ত হইয়া বলিয়া উঠিল, ন ন না, এ-সব নয়, এ-সব নয়। এ আমাদের কাম্য নয় । কমল বলিল, তাই বলুন এ আমাদের কাম্য নয়, বলুন আমাদের আদর্শ স্বতন্ত্র। বলুন সংসারত্যাগ ও বৈরাগ্য-সাধনা আমাদের নয়, আমাদের সাধনা পৃথিবীর সমস্ত ঐশ্বৰ্য্য, সমস্ত সৌন্দৰ্য্য, সমস্ত প্রাণ নিয়ে বেঁচে থাকা । কিন্তু তার কি শিক্ষা ছেলেদের এই ? গায়ে একটা মোটা জামা নেই, পায়ে জুতা নেই, পরণে জীর্ণ বস্ত্র, মাথায় রুক্ষকেশ, একবেলা অৰ্দ্ধাশনে যারা কেবল অস্বীকারের মধ্যেই বড় হয়ে উঠচে, পাওয়ার আনন্দ যার নিজের মধ্যেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল, দেশের লক্ষ্মী কি পাঠিয়ে দেবেন শেষে তাদের হাত দিয়েই র্তার ভাড়ারের চাবি ? হরেনবাবু, পৃথিবীর দিকে একবার চেয়ে দেখুন। যারা অনেক পেয়েচে, তার সহজেই দিয়েচে, এমন অকিঞ্চনতার ইস্কুল খুলে তাদের ত্যাগের গ্রাজুয়েট তৈরি করতে হয়নি। সতীশ হতবুদ্ধি হইয়া প্রশ্ন করিল, দেশের মুক্তি-সংগ্রামে কি ধৰ্ম্মের সাধনা, ত্যাগের দীক্ষা প্রয়োজনীয় নয় আপনি বলেন ? কমল কহিল, মুক্তি-সংগ্রামের অর্থ-টা আগে পরিষ্কার হোক । সতীশ ইতস্তত: করিতে লাগিল ; কমল হাসিয়া বলিল, ভাবে বোধ হয় আপনি বিদেশী রাজশক্তির বন্ধন-মোচনকেই দেশের মুক্তি-সংগ্রাম বলচেন। তা যদি হয় সতীশবাবু, আমি নিজে ত ধৰ্ম্মের সাধনাও করিনি, ত্যাগের দীক্ষাও নিইনি, তবুও আমাকে ঠিক সামনের দলেই পাবেন এ আপনাকে আমি কথা দিলুম। কিন্তু আপনাদের খুজে পাব ত? সতীশ কথা কহিল না, কেমন একপ্রকার যেন বিব্রত হইয়া উঠিল এবং তাহারই চঞ্চল দৃষ্টির অমুসরণ করিতে গিয়া কমল কিছুক্ষণের জন্য চক্ষু ফিরাইতে পারিল না। এই লোকটিই রাজেন্দ্র। কখন নিঃশব্দে আসিয়া দ্বারের কাছে দাড়াইয়াছিল সতীশ ভিন্ন আর কেহ লক্ষ্য করে নাই। সে আচ্ছন্নের স্থায় নিম্পলকচক্ষে এতক্ষণ তাহারই প্রতি চাহিয়াছিল, এখনও ঠিক তেমনি করিয়াই চাহিয়া রহিল। ইহার চেহারা একবার দেখিলে ভোলা কঠিন। বয়স রোধ করি পচিশ-ছাব্বিশ হইবে। রঙ অতিশয় ফর্সা, হঠাৎ দেখিলে অস্বাভাবিক বলিয়া মনে হয়। প্রকাণ্ড কপাল, স্বমুখের দিকটায় এই বয়সেই টাকের মত হইয়া ঢের বড় দেখাইতেছে, চোখ গভীর এবং অতিশয় । ক্ষুদ্ৰ—অন্ধকার গর্ত হইতে ইদুরের চোখের মত জলিতেছে, নীচেকার পুরু মোটা ঠোট ᎼᎼᏔ!