পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/১৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষ প্রশ্ন মনে পড়িল । একদিকে তাহার একজামিন পাশ করিবার অসাধারণ দক্ষতা, আর একদিকে সফলতার মুখে তার ত্যাগ করিবার অপরিসীম ঔদাসীন্ত। বয়স তাহার আল্প, সবেমাত্র যৌবনে পা দিয়াছে, এই বয়সেই নিজের বলিয়া কিছুই হাতে রাখে নাই, পরের কাজে বিলাইয়া দিয়াছে। অজিত সে অবধি নীরব হইয়াছিল। রাত্রি তিনটা বাজিয়া গেছে শোনার পর কোন-কিছুতে মন দিবার শক্তি আর তাহার ছিল না। শুধু একটা কাল্পনিক, অসম্বন্ধ প্রশ্নোত্তরমালার আঘাত অভিঘাতের নীচে এই নিশীথ অভিযানের নিরবচ্ছিন্ন কুন্ত্রতায় অন্তর তাহার কালো হইয়া রহিল। খুব সম্ভব কেহই কিছু জিজ্ঞাসা করিবে না, হয়ত জিজ্ঞাসা করিবার ভরসাও কেহ পাইবে না, শুধু আপন আপন ইচ্ছা অভিরুচি ও বিদ্বেষের তুলি দিয়া অজ্ঞাত ঘটনার আদ্যোপাস্ত কাহিনী বর্ণে বর্ণে স্বজন করিয়া লইবে । আর ইহার চেয়েও বেশি ব্যাকুল করিয়াছিল তাহাকে এই লজ্জাহীন মেয়েটার নির্ভয় সত্যবাদিত । এ-জগতে মিথ্যা বলার ইহার প্রয়োজন নাই। এ যেন পৃথিবী-মৃদ্ধ সকলকে শুধু বিব্রত ও জব্ব করা। এদিকে শিবনাথের পীড়ার উপলক্ষে কে এবং কাহার উপস্থিত হইয়াছে সে জানে না। এই মেয়েটিকে তাহারা প্রশ্ন করিতেছে মনে করিয়াও অজিতের গায়ের রক্ত শীতল হইয়া আসিল । হঠাৎ তাহার মনে হইল কমলকে সে ঘৃণা করে। ইহারই লুব্ধ আশ্বাসে সে যে আত্মবিশ্বত উন্মাদের ন্যায় মুহূৰ্ত্তের জন্যও জ্ঞান হারাইয়াছে ইহার কঠিন শাস্তি যেন তাহার হয়, এই বলিয়া সে বার বার করিয়া আপনাকে আপনি অভিশাপ দিল । গেটের মধ্যে প্রবেশ করিয়াই তাহার চোখে পড়িল সম্মুখের খোলা জানালায় দাড়াইয়া আগুবাবু স্বয়ং। বোধ হয় তাহারই প্রতীক্ষায় উদগ্রীব হইয়া আছেন। গাড়ীর শব্দে নীচে চাহিয়া বলিলেন, অজিত এলে ? সঙ্গে কে, কমল ? ই । যদু, কমলকে শিবনাথের ঘরে নিয়ে যাও। গুনেচ বোধ হয় তার অসুখ ? বলিতে বলিতে তিনি নিজেই নামিয়া আসিলেন ; কহিলেন, এই ঋতু-পরিবর্তনের কালটা এমনিই বড় খারাপ, তাতে ব্যারাম-স্তারাম হঠাৎ যা স্বরু হয়েচে, লোক মারা পড়চেও বিস্তর। আমার নিজের দেহটাও সকাল থেকে ভাল নয়, যেন জরভাব করে রেখেচে । কমল উদ্বিগ্ন হইয়া কছিল, তবে আপনি কেন জেগে রয়েচেন ? এখানে দেখবার লোকের ত অভাব নেই। Y R$