পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/১৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষ প্রশ্ন আপ্তবাবু মুখ টিপিয়া হাসিতেন, কিন্তু অবিনাশ ক্রোধে জ্বলিয়া যাইতেন। হরেন্দ্র ৰলিত, আপনি মস্ত বাহাদুর অক্ষয়বাবু, আপনার জয়-জয়কার হোক। আমরা সবাই মিলে প্লাকের মধ্যে পড়ে যেদিন হাবুডুবু খাব, আপনি সেদিন তীরে দাড়িয়ে বগল বাজিয়ে নৃত্য করবেন, আমরা কেউ নিন্দে করব না। অক্ষয় জবাব দ্বিত, নিন্দের কাজ আমি করিনি হরেন। গৃহস্থ মানুষ, সহজ সোজা বুদ্ধিতে সমাজকে মেনে চলি । বিবাহের নতুন ব্যাখ্যা দিতে চাইনে, বিশ্ব-বখাটে একপাল ছেলে জুটিয়ে ব্রহ্মচারী-গিরি করে বেড়াইনে। আশ্রমে পায়ের ধূলোর পরিমাণটা আর একটু বাড়িয়ে নেবার ব্যবস্থা কর গে ভায়া, সাধন-ভজনের জন্ত ভগবতে হবে না । দেখতে দেখতে সমস্ত আশ্রম বিশ্বামিত্ৰ ঋষির তপোবন হয়ে উঠবে এবং হয়ত চিরকালের মত তোমার একটা কীৰ্ত্তি থেকে যাবে। অবিনাশ ক্রোধ ভুলিয়া উচ্চ হাস্ত করিয়া উঠিতেন এবং নিৰ্ম্মল চাপ-হাসিতে আশুবাবুর মুখখানিও উজ্জল হইয়া উঠিত। হরেন্দ্রর আশ্রমের প্রতি কাহারও আস্থা ছিল না, ও একটা ব্যক্তিগত খেয়াল বলিয়াই তাহারা ধরিয়া লইয়াছিলেন। প্রত্যুত্তরে হরেন্দ্র ক্রোধে আরক্ত হইয়া কহিত, জানোয়ারের সঙ্গে ত যুক্তি-তর্ক চলে না, তার অন্য বিধি আছে। কিন্তু সে ব্যবস্থা হয়ে ওঠে না বলেই আপনি যাকে তাকে গুতিয়ে বেড়ান। ইতর-ভদ্র মহিলা-পুরুষ কিছুই বাদ যায় না। এই বলিয়া সে অপর দুজনকে লক্ষ্য করিয়া কহিত, কিন্তু আপনার প্রশ্রয় দেন কি বলে ? এতবড় একটা কুৎসিত ইঙ্গিতও যেন ভারি একটা পরিহাসের ব্যাপার। অবিনাশ অপ্রতিভ হইয়া কহিতেন, না না, প্রশ্রয় দেব কেম, কিন্তু জানই ত অক্ষয়ের কাণ্ডজ্ঞান নেই। হরেন কহিত, কাণ্ডজ্ঞান ওর চেয়ে আপনাদের আরও কম। মামুষের মনের চেহারা ত দেখতে পাওয়া যায় না সেজদা, নইলে হাসি-তামাসা কম লোকের মুখেই শোভা পেত। বিবাহের ছলনায় কমলকে শিবনাথ ঠকিয়েচেন, কিন্তু আমার নিশ্চয় বিশ্বাস সেই ঠকাটাও কমল সত্যের মতই মেনে নিয়েছিলেন, সংসারের দেনা-পাওনার লাভ-ক্ষতির বিবাদ বাধিয়ে তাকে লোক-চক্ষে ছোট করতে চাননি । কিন্তু তিনি ন চাইলেই বা আপনার ছাড়বেন কেন ? শিবনাথ তার ভালবাসার ধন, কিন্তু আপনাদের সে কে ? ক্ষমার অপব্যবহার আপনাদের সইল না। এই ত আপনাদের ঘৃণার মূলধন ! একে ভাঙ্গিয়ে যতকাল চালানো যায় চালান, আমি বিদায় নিলুম। এই বলিয়া হরেন্দ্র সেদিন রাগ করিয়া চলিয়া গিয়াছিল। তাহার মনের মধ্যে এই প্রত্যয় স্বস্তৃঢ় ছিল যে, কমলের মুখ দিয়াই একদিন এ-কথা ব্যক্ত হইবে যে, শৈব (tసి