পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/১৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষ প্রশ্ন দান করিবার সম্বল তাহার শেষ হয় নাই এবং বোধ করি সাহস ও সাত্বনা দিবার অভিপ্রায়েই কহিল, আপনার সঙ্গে আমি তর্ক করচিনে কমল, কিন্তু এ-ছাড়া আর কিছু ভাবতেও পারিনে যে, আমাদের মত আপনার দারিদ্র্যও প্রকৃত নয়, একবার ইচ্ছে করলেই এ দুঃখ মরীচিকার মত মিলিয়ে যাবে । কিন্তু সে ইচ্ছে আপনার নেই, কারণ আপনিও জানেন স্বেচ্ছায় নেওয়া দুঃখকে ঐশ্বৰ্য্যের মতই ভোগ করা যায়। কমল বলিল, যায়। কিন্তু কেন জানেন ? ওটা অপ্রয়োজনের দুঃখ-দুঃখের অভিনয় বলে। সকল অভিনয়ের মধ্যেই থানিকটা কৌতুক থাকে, তাকে উপভোগ করায় বাধা নেই। বলিয়া সে নিজেও কৌতুকভরে হাসিল। সহসা ভারি একটা বেমরা বাজিল । খোচ খাইয়া হরেন্দ্র ক্ষণকাল মৌন থাকিয়া জবাব দিল, কিন্তু এটা তো মানেন যে, প্রাচুর্য্যের মাঝেই জীবন তুচ্ছ হয়ে আসে, অথচ দুঃখ-দৈন্তের মধ্যে দিয়ে মামুষের চরিত্র মহৎ ও সত্য হয়ে গড়ে ওঠে ? কমল ষ্ট্রোভের উপর হইতে কড়াটা নামাইয়া রাখিল এবং আর একটা কি চড়াইয়া দিয়া বলিল, সত্য হয়ে গড়ে ওঠার জন্য ওদিকেও খানিকটা সত্য থাকা চাই হরেনবাবু। বড়লোক, বাস্তবিক অভাব নেই, তবু ছদ্ম-অভাবের আয়োজনে ব্যস্ত। আবার যোগ দিয়েচেন অজিতবাবু। আপনার আশ্রমের ফিলজফি আমি বুঝিনে, কিন্তু এটা বুঝি, দৈন্ত-ভোগের বিড়ম্বন দিয়ে কখনো বৃহৎকে পাওয়া যায় না। পাওয়া যায় শুধু খানিকট দম্ভ আর অহমিকা। সংস্কারে অন্ধ না হয়ে একটুখানি চেয়ে থাকলেই, এ-বস্তু দেখতে পাবেন—দৃষ্টাস্তের জন্য ভারত পর্যটন করে বেড়াতে হবে না। কিন্তু তর্ক থাক, রান্না শেষ হয়ে এল, এবার খেতে বসুন। হরেন্দ্র হতাশ হইয়া বলিল, মুস্কিল এই যে ভারতবর্ষের ফিলজফি বোঝা আপনার সাধ্য নয়। আপনার শিরার মধ্যে ম্লেচ্ছ-রক্তের ঢেউ বয়ে যাচ্ছে—হিন্দুর আদর্শ ও-চোখে তামাস বলেই ঠেকবে। দিন, কি রান্না হয়েচে খেতে দিন । এই যে দিই, বলিয়া কমল আসন পাতিয়া ঠাই করিয়া দিল। একটুও রাগ করিল না । হরেন্দ্র সেইদিকে চাহিয়া হঠাৎ বলিয়া উঠিল, আচ্ছা, ধরুন কেউ যদি যথার্থ-ই সমস্ত বিলিয়ে দিয়ে সত্যকার অভাব ও দৈম্ভের মাঝেই নেমে আসে তখন ত অভিনয় বলে তাকে তামাসা করা চলবে না ? তখন ত— কমল বাধা দিয়া কহিল, না, তখন আর তামাসা নয়, তখন সত্যিকার পাগল বলে মাথা চাপড়ে কাদবার সময় হবে। হরেক্সবাবু, কিছুকাল পূৰ্ব্বে আমিও কতকটা আপনার মত করেই ভেবেচি, উপবাসের নেশার মত আমাকেও তা মাঝে মাঝে আচ্ছন্ন ১৭১ వf=Rశి