পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/১৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎসাহিত্য-সংগ্ৰহ তার ছবি দেখতে পেতাম। ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি যেন তার কোন বিপদ नां घटप्ले । প্রকাশ্বে কেহ কিছু বলিল না, কিন্তু মনে মনে সকলে বোধ হয় এ-প্রার্থনায় যোগ দিল । কমল জিজ্ঞাসা করিল, নীলিমাকে আজ ত দেখতে পেলুম না ? বোধ করি কাজে ব্যস্ত আছেন ? আপ্তবাবু কহিলেন, কাজের লোক, দিন-রাত কাজেই ব্যস্ত থাকেন সত্যি, কিন্তু আজ শুনতে পেলাম মাথা ধরে বিছানা নিয়েচেন। শরীরটা বোধ হয় একটু বেশি রকমই খারাপ হয়েচে, নইলে এ তার স্বভাব নয়। কোন মানুষই যে অবিশ্রান্ত এত সেবা, এত পরিশ্রম করতে পারে, নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না । ক্ষণকাল চুপ করিয়া থাকিয় বলিলেন, অবিনাশের সঙ্গে আলাপ আগ্রায়। মাঝে মাঝে আসি যাই—কতটুকুই বা পরিচয়, অথচ আজ ভাবি সংসারে আপন-পর বলে যে একটা কথা আছে সে কত অর্থহীন। দুনিয়ায় আপন-পর কেউ নেই কমল, ম্রোতের টানে কে যে কখন কাছে আসে, আর কে যে ভেসে দূরে যায়—তার কোন হিসাব কেউ জানে না। কথাটা যে কাহাকে উদ্দেশ করিয়া কিসের দুঃখে বলা হইল তাহা শুধু সেই অপরিচিত রমণী বেলা ব্যতীত অপর দুজনেই বুঝিল । আগুবাবু কতকটা যেন নিজের মনেই বলিতে লাগিলেন, এই রোগ থেকে উঠে পৰ্য্যন্ত সংসারে অনেক জিনিসই যেন আর একরকম চেহারায় চোখে ঠেকে। মনে হয়, কিসের জন্তই বা এত টানাটানি এত বাধাবাধি, এত ভাল-মন্দর বাদামুবাদ—মানুষের অনেক ভুল, অনেক ফাকি নিজের চারপাশে জমা করে স্বেচ্ছায় কানা হয়ে গেছে। আজও তাকে বহু যুগ ধরে অনেক অজানা সত্য আবিষ্কার করতে হবে, তবে যদি একদিন সে সত্যিকার মানুষ হয়ে উঠতে পারে। আনন্দ ত নয়, নিরানন্দই যেন তার সভ্যতা ও ভদ্রতার চরম লক্ষ্য হয়ে উঠেচে । - কমল বিস্ময়ে চাহিয়া রহিল। র্তাহার বাক্যের তাৎপৰ্য্য যে নিঃসংশয়ে বুঝিতেছে তাহা নয়—যেন কুয়াসার মধ্যে আগন্তুকের মুখ দেখা । কিন্তু পায়ের চলন অত্যন্ত চেন । | আপ্তবাবু আপনিই থামিলেন। বোধ হয় কমলের বিম্মিত দৃষ্টি র্তাহাকে নিজের দিকে সচেতন করিল, বলিলেন, তোমার সঙ্গে আমার আরও অনেক কথা আছে কমল, আর একদিন এসে ।