পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/২০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নেয়নি। অামারে ত সেই দশা। আপনার সবাই যখন আমাকে ঘূণীয় দূর করে ছিলেন, এই বিদেশে কারো কাছে গিয়ে দাড়াবার যখন আর পথ রইল না—সেই গভীৱ দুঃখের দিনের ঐ শিল্প-কাজটুকু। সেদিন ঠিক কাকে স্মরণ করে যে করেছিলুম আমি কোনদিন হয়ত জানতে পারতুম না। প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। কিন্তু আজ বিছানা পাততে এসে হঠাৎ মনে হ’লো, না না, ওতে নয়। যাতে কেউ কোনদিন গুয়েচে তাতে আপনাকে আমি কোনমতে শুতে দিতে পারিনে । কেন পারো না ? “ কি জানি, কে যেন ধাক্কা দিয়ে ঐ কথা বলে দিয়ে গেল । এই বলিয়া সে ক্ষণকাশ মৌন থাকিয়া কহিল, হঠাৎ স্মরণ হ’লে ঐগুলি বাক্সে তোলা আছে । আপনি তখন বাইরে মুখ ধুচ্ছিলেন, এখনি এসে পড়বেন, তাড়াতাড়ি খুলে এনে পাততে গিয়ে আজ প্রথম টের পেলুম সেদিন যাকে ভেবে রাত্রি জেগে ফুল-লতা-পাত একেছিলুম সে আপনি । * অজিত কথা কহিল না। শুধু একটা আরক্ত আভা তাহার মুখের পরে দেখা দিয়া চক্ষের নিমেষে নিবিয়া গেল । , কমল নিজেও কিছুক্ষণ নীরব থাকিয়া জিজ্ঞাসা করিল, চুপ করে কি ভাবচেন বলুন ত ? অজিত কহিল, শুধু চুপ করেই আছি, ভাবতে পারচিনে। তার কারণ ? த் কারণ? তোমার কথা শুনে আমার বুকের ভেতর যেন ঝড় বয়ে গেল। শুধুই বাড়–না এলো আনন্দ, না এলো আশা । কমল নিঃশব্দে চাহিয়া রহিল। অজিত ধীরে ধীরে বলিতে লাগিল, কমল, একটা গল্প বলি শোনো। আমার মাকে একবার আমাদের গৃহদেবতা রাধাবল্লভ জিউ পুজোর ঘরে মূৰ্ত্তি ধরে দেখা দিয়েছিলেন, তার হাত থেকে খাবার নিয়ে স্বমুখে বসে খেয়েছিলেন–এ তার নিজের চোখে দেখা । তবুও বাড়ির কেউ আমরা বিশ্বাস করতে পারিনি। সবাই বুঝলে এ তার স্বপ্ন, কিন্তু এই অবিশ্বাসের দুঃখ তার মৃত্যুকাল পৰ্য্যন্ত যায়নি। আজ তোমার কথা গুনে আমার সেই কথা মনে পড়চে। তুমি তামাসা করোনি জানি, কিন্তু আমার মায়ের মতো তোমারো কোথাও মন্ত ভূল হয়েচে । মানুষের জীবনে এমন বহুকাল যায়, নিজের সম্বন্ধে সে অন্ধকারেই থাকে। হয়ত হঠাৎ একদিন চোখ খোলে। আমারও তেমনি। একদিন পৃথিবীর কত জায়গায় ত ঘুরেচি, শুধু এই আগ্রায় এসে আমি নিজেকে দেখতে পেলাম। জামাব )。"